বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি, ত্রিপুরা; ত্রিপুরা সরকারের বন দপ্তরের ত্রিপুরা বায়োডাইভারসিটি বোর্ড এবং আগরতলা সাইক্লোহোলিক্স ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটির আচার্য সত্যম রায়চৌধুরীর দিকনির্দেশনায় ও অনুপ্রেরণায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবারের পরিবেশ দিবসের মূল স্লোগান ছিল — “প্লাস্টিক দূষণকে পরাজিত করুন”, যার প্রেক্ষিতে প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সাইকেল র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালিটি সকাল ৬টায় শুরু হয় উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের সামনে থেকে, যার সূচনা করেন ত্রিপুরা ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের মুখ্য বন সংরক্ষক শ্রী রবীন্দ্র কুমার শ্যামল, এ.সি.এফ. শ্রীমতি অনিমা দাস, টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি ত্রিপুরার উপাচার্য প্রফেসর ড. রতন কুমার সাহা এবং টেকনো ইন্ডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রিন্সিপাল ড. দিবাকর দেব। র্যালিটি আগরতলা শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটির মহেশখলা ক্যাম্পাসে শেষ হয়। এই র্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও আগরতলা সাইক্লোহোলিক্স ফাউন্ডেশনের সদস্যরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। র্যালি শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মেডেল ও সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়।
র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে পৌঁছানোর পর টি.আই.ইউ.টি. সাইক্লিং ক্লাবেরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। পরবর্তীতে টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ত্রিপুরা বায়োডাইভারসিটি বোর্ড ও বনদপ্তরের উদ্যোগে এক সচেতনতামূলক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন মুখ্য বন সংরক্ষক আর কে শ্যামল, এ.সি.এফ. শ্রীমতি অনিমা দাস, সাব-ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার শ্রী তপজ্যোতি কিশোর দেববর্মা সহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও বিশিষ্টজনেরা। আলোচনা সভার মূল বিষয় ছিল— প্লাস্টিক দূষণের অবসান। মুখ্য বন সংরক্ষক তাঁর বক্তব্যে বলেন, “পৃথিবীকে সুন্দরভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে। প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশ দূষণ, জীববৈচিত্র্যের ক্ষয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি বাড়ছে।” তিনি ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “গাছ আমাদের জীবন— একটি গাছ, একটি প্রাণ। তাই গাছ লাগাতে হবে এবং তার সঠিক পরিচর্যা করতে হবে।”উপাচার্য প্রফেসর ড. রতন কুমার সাহা তাঁর বক্তব্যে বলেন, “দৈনিক হাজার হাজার ডিজেল ও পেট্রোল চালিত গাড়ি এবং বাইক থেকে আগরতলা শহরে ব্যাপক বায়ু দূষণ হচ্ছে। যদি আমরা সকলে মিলে সাইকেল বা ইলেকট্রিক যানবাহনের ব্যবহার বাড়াই, তাহলে দূষণের পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে।” তিনি বলেন, “জিমে না গিয়ে সাইকেল চালালে শরীর যেমন ফিট থাকবে, তেমনি পরিবেশও ফিট থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “প্লাস্টিক বর্জ্য মাটি ও জল দূষিত করে, ড্রেনেজ বন্ধ করে দেয় এবং বন্যপ্রাণীর ক্ষতি করে। শহরের জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো প্লাস্টিক বর্জ্য। তাই আমাদের প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে এবং টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসকে প্লাস্টিকমুক্ত ঘোষণার জন্য আমরা নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালাব।”অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় ৫০টি বৃক্ষের চারা রোপণ করা হয়। এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে আমন্ত্রিত অতিথি, শিক্ষক, কর্মচারী এবং ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আরও দুটি ক্লাব — ভয়ানেক্স (অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব) এবং গ্রীন স্কাউটস (পরিবেশ সচেতনতা ক্লাব) — এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে বিশ্ব পরিবেশ দিবসকে কেন্দ্র করে একটি কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা উৎসাহের সঙ্গে অংশ নেন ও পরিবেশকে দূষণমুক্ত করার অঙ্গীকারবদ্ধ হন।