খুব শীঘ্রই রাজ্যে এফসিআই-এর আঞ্চলিক অফিস গড়ে তোলা হবে। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে খাদ্য, পর্যটন এবং পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এই সংবাদ জানান। তিনি সম্প্রতি দিল্লি সফরকালে কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবন্টন ও উপভোক্তা বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী প্রহল্লাদ যোশী, পর্যটন দপ্তরের মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী কিঞ্জরাপু রামমোহন নাইডুর সাথে সাক্ষাৎ করে রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং বিভিন্ন দাবিদাওয়া পেশ করেন। রাজ্যের দাবিগুলি সম্পর্কে আজ সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন খাদ্যমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। সাংবাদিক সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জানান, কেন্দ্রীয় খাদ্য, গণবণ্টন ও উপভোক্তা বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী প্রহল্লাদ যোশীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন ও প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার আওতায় গণবন্টনের ক্ষেত্রে রাজ্য রেশন শপ ডিলারদের কমিশন বাবদ কেন্দ্রীয় বরাদ্দের প্রায় ৫৩ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে বিভিন্ন কারণে আটকে ছিল বলে অবহিত করেন। এই অর্থ শীঘ্রই রিলিজ করার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানানো হয়। কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, অতিশীঘ্রই এই অর্থ খাদ্য দপ্তরকে প্রদান করা হবে। খাদ্যমন্ত্রী শ্রীচৌধুরী জানান, রাজ্যে বর্তমানে রেশন শপগুলিতে উপভোক্তাদের ই-কেওয়াইসি প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে। ইতিমধ্যে রাজ্যের প্রায় ৬৯ শতাংশ ভোক্তার ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছে। রাজ্যে গণবণ্টন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত রেশন ডিলারগণ খাদ্যশস্য বিতরণের জন্য কমিশন বাবদ বর্তমানে কুইন্টাল প্রতি ১৪৩ টাকা পেয়ে থাকেন, যা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ৭৫: ২৫ অনুপাতে বহন করে।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কমিশনের পরিমাণ বাড়িয়ে কুইন্টাল প্রতি ১৮০ টাকা করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে রেশন শপে ইপস মেশিনের সঙ্গে ইলেকট্রনিক ওজন মাপক যন্ত্রের সংযুক্তিকরণ বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ হয়ে গেলে রাজা রেশন ডিলারাও কমিশন বাবদ ১৮০ টাকা করে পাবেন। রাজ্য সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে। এই বিষয়েও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পেশ করা হয়। কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারকালে জম্পুইহিলে পর্যটন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে ৭০ কোটি টাকার প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে বলে জানান পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। জিরানীয়ার শচীন্দ্রনগর কলোনী এলাকায় ত্রিপুরা হেরিটেজ ভিলেজ এন্ড সংগীত এক্সপিরিয়েন্স প্রকল্পের উন্নয়নে ৫০ কোটি টাকা এবং আগরতলার লক্ষ্মীলুঙ্গা এলাকায় মিস্টিক প্লেন্টেশান রিট্রিট প্রকল্পের উন্নয়নে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জানান, কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী দাবিগুলির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন এবং শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি নিয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, ধর্মীয় পর্যটনের প্রসারে উদয়পুরের বনদোয়ারে ৯৭ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একান্ন শক্তিপিঠ নির্মাণে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয় থেকে রাজ্যকে ৬৭ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে পরিবহণ মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জানান, কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এর সাথে সাক্ষাৎকারকালে গুয়াহাটি এবং আগরতলার মধ্যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু করা, রাজ্যে সিঙ্গেল রেল লাইনকে ডাবল লাইনে পরিবর্তন, বদরপুর-আগরতলা রুটে রেল লাইনের বিদ্যুতায়নের অগ্রগতি এবং ত্রিপুরায় বৈদ্যুতিক যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করা, আগরতলা গুয়াহাটি ইন্টারসিটি রেল পরিষেবা চালু করা, আগরতলা-জম্মু, আগরতলা-পুরী এবং আগরতলা-গয়া এক্সপ্রেস ট্রেন পরিষেবা চালু করা, সেকেরকোটে নির্মীয়মান ফুয়েল স্টোরেজ ডিপো পর্যন্ত রেল লাইনের কাজ ত্বরান্বিতকরণ, রাজ্যে চালু সমস্ত লোকাল এক্সপ্রেস ট্রেনগুলিতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, আগরতলা রেল স্টেশনকে বিশ্বমানের রেল স্টেশনে পরিণত করা এবং বিলোনীয়া, তেলিয়ামুড়া ও মনু রেল স্টেশনে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ চালু করা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবিষয়ে শীঘ্রই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রী রামমোহন নাইডু কিঞ্জারাপুর সাথেও সাক্ষাৎ করে মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা চালু করা, বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পরিষেবা চালু করা, আগরতলা-দিল্লি রুটে আরও বিমান পরিষেবা বাড়ানো, আগরতলা-মুম্বাই এর মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু, আগরতলা থেকে বিভিন্ন রুটে বিমান ভাড়া যেন সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে ইত্যাদি দাবিগুলি উত্থাপন করেন। কেন্দ্রীয় অসামরিক পরিবহন মন্ত্রী কৈলাসহর বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিবহন দপ্তরের সচিব সি কে জমাতিয়া, পর্যটন দপ্তরের সচিব ইউ কে চাকমা, খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের বিশেষ সচিব দেবপ্রিয় বর্ধন, খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের অধিকর্তা সুমিত লোধ এবং পরিবহন দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব সুব্রত চৌধুরী।