স্কুল বন্ধ রাখা তা অযৌক্তিক: বিশ্ব ব্যাংককর্তা

প্রতিনিয়ত রূপ বদলাচ্ছে করোনা সংক্রমণ, কিন্তু অন্যদিকে সংক্রমণের নিজের শক্তিও কমছে ধীরে ধীরে৷ শেষের শুরু! এবার হয়তো করোনা মুক্তির সময় এসে গিয়েছে৷ এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ইতিমধ্যেই করোনাকে ‘ফ্লু’ বলে ঘোষণা করেছে স্পেন৷ করোনার থেকে ‘ঘাতক’ শব্দটি সরিয়ে দিয়েছে আয়ারল্যান্ড৷ বিশ্বের চিকিৎসক মহলের মতে, ওমিক্রন রূপেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে কোভিড-১৯৷ সংক্রমণ রুখতে বার বার লকডাউন হয়েছে৷ করোনার দাপটে বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছিল মৃত্যু মিছিল৷ তবে সেই পর্ব কাটিয়ে ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে নীল গ্রহ৷ স্বাভাবিক ভাবেই চলছে গণপরিবহন৷ খুলেছে রেস্তোরাঁ, শপিং মল৷ তাহলে স্কুল-কলেজ বন্ধ কেন? সেই প্রশ্নই এবার তুলে দিলেন বিশ্বব্যাঙ্কের কর্তা৷ তিনি মনে করেন, করোনার চোখ রাঙানি এড়িয়ে এবার স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার সময় এসে গিয়েছে৷ 

বিশ্ব ব্যাঙ্কের শিক্ষা সংক্রান্ত ডিরেক্টর জাইম সাভেদ্রার কথায়, বিধি-নিষেধ মেনে বার-রেস্তরাঁ সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে৷ তাহলে কোন যুক্তিতে স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে? করোনা গোটা বিশ্বকে গ্রাস করার পর থেকেই তাঁর নেতৃত্বাধীন একটি টিম শিক্ষাক্ষেত্রে করোনার প্রভাব সংক্রান্ত তথ্য  নিয়ে নাড়াচাড়া করছে৷ সেই তথ্য বিশ্লেষণ করেই তাঁর বলছেন,  স্কুল খোলার ফলে সংক্রমণ বেড়েছে—বিশ্বের কোনও দেশেই এমন তথ্য নেই৷ জাইম বলেন,  ‘‘অনেকেই মনে করছেন, এখনও পর্যন্ত পড়ুয়াদের টিকাকরণ সম্পন্ন হয়নি৷ ফলে স্কুল খুললে সংক্রমণ বাড়বে৷ কিন্তু এই দাবির পক্ষে কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। অবশ্যই স্কুল খোলার প্রয়োজন রয়েছে। আর নতুন করে সংক্রমণের ঢেউ আছড়ে পড়লে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত সর্বশেষ পদক্ষেপ। স্কুল খুললে শিশুদের যতটা শারীরিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ স্কুল বন্ধ থাকলে তার থেকে অনেক বেশি মূল্য চোকাতে হবে।’’

তাহলে প্রথম দফায় কেন স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? জবাবে ব্যাঙ্ককর্তা বলেন,  ‘‘২০২০ সালে যখন প্রথম করোনার ঢেউ আঘাত হানল, তখন কী ভাবে এই মহামারীর মোকাবিলা করতে হবে, তা কারোরই জানা ছিল না। সেই কারণেই স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে বহু দেশেই স্কুল খুলেছে৷ তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও অনেক দেশ স্কুল খুলেছে। কিন্তু এর জন্যে সংক্রমণের হারে তেমন বৃদ্ধি ঘটেনি। অনেক দেশে আবার স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে৷ পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে স্কুল খোলা বা বন্ধ রাখার কোনও সম্পর্কই নেই। তৃতীয় ঢেউয়ে ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্ত। শিশুরা ওমিক্রনে আক্রান্ত হলেও ক্ষতির সম্ভাবনা খুবই কম। জীবনের ঝুঁকিও তেমন নেই।’  

ভারতে স্কুল বন্ধ রাখার প্রভাব কতটা? ব্যাঙ্ককর্তা জাইম বলেন, ‘‘যতটা ভাবা হয়েছিল, ক্ষতির পরিমাণ তার চেয়ে অনেক বেশি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তার প্রভাব সরাসরি পড়েছে শিশুদের দক্ষতায়৷ ‘লার্নিং পভার্টি’ বা শিক্ষায় দৈন্য বেড়েছে। ১০ বছরের শিশুর পক্ষে একটি সহজ পাঠ্য বিষয় পড়া ও বোঝার ক্ষমতা হ্রাস পয়েছে। দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় ভারতে লার্নিং পভার্টির হার ৫৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭০ শতাংশে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যার প্রভাব আগামী দিনে রাষ্ট্রের সামগ্রিক আয় বা বৃদ্ধির উপর পড়বে। ২০২০সালে বিশ্ব ব্যাঙ্ক প্রথমে জানিয়েছিল, স্কুল বন্ধের ফলে ভারতের আয় কমবে ৪০ হাজার কোটি ডলার।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *