মানুষের জন্য মানুষের সেবায় নিরন্তর কাজ করতে হবে নার্সদের। নার্সিং একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পেশা। স্বাস্থ্য পরিষেবাকে গতিশীল করতে ৩৩২ নার্সিং অফিসার নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়া জারি রেখেছে সরকার। এছাড়া আরো ১০০ জনকে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করার জন্য অর্থ দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। ত্রিপুরা নার্সিং কাউন্সিলের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, মহিয়সী নারী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিন উপলক্ষে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস উদযাপন করা হয়। ১৮২০ সালের ১২ মে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। লেডি উইথ ল্যাম্প হিসেবে আমরা তাঁকে জানি। আজ ২০৫ তম আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস। আজকের দিনটি নার্সদের কাজ ও তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার দিন। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহতদের সেবাদানের মাধ্যমে তাঁর অবদান এখনো সবাই স্মরণ করেন। তাঁর কারণেই পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বে নার্সিং প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে উঠেছে। এবার নার্সেস দিবসের থিম – ‘আমাদের নার্সগণ আমাদের ভবিষ্যত, নার্সদের যত্ন নিন, অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করুন’।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নার্সিংয়ের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও সুস্থতার উপর আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। আর এই পেশাকে আরো আকর্ষণীয় করতেই এবার এই থিম নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক গুরুত্বের উপরও জোর দেওয়া হয়েছে। নার্সিং পেশার মাধ্যমে গুণগত সেবাযত্ন বৃদ্ধি করা গেলে শক্তিশালী অর্থনীতিও সম্ভব হবে। নার্সিং একটা গুরুত্বপূর্ণ পেশা। হাসপাতালে যখন কোন রোগী যায় তখন ডাক্তাররা আসার আগেই নার্সরাই প্রাথমিক সেবা দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ তারা হচ্ছেন ফ্রন্ট রানার। নার্সরা হচ্ছেন মুমূর্ষু ব্যক্তিদের কাছে আস্থা। মুমূর্ষু রোগীদের মুখে হাসি ফোটান তারা। রোগীদের সময়মতো ব্লাড প্রেসার চেক করা থেকে শুরু করে ঔষধ খাওয়ানো, ইনজেকশন দেওয়া ইত্যাদি সেবাযত্ন করেন তারা। তাই মুমূর্ষু ব্যক্তিদের অধিকার ও অবস্থা নির্ভর করছে নার্সিং স্টাফদের উপর। সাধারণত নার্সিং স্টাফের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে। এক্ষেত্রে রোগীর তুলনায় কত সংখ্যক নার্সিং স্টাফ থাকবে সেটা দেখা হচ্ছে। আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, মানুষের জন্য কাজ করছেন নার্সিংয়ের সঙ্গে যুক্তরা। মানুষকে সেবা করার সৌভাগ্য হয়েছে আপনাদের।
ত্রিপুরা থেকে অনেক ছেলেমেয়ে এখন নার্সিং পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাইরে যাচ্ছেন। নিরলস চেষ্টা ও সেবার মাধ্যমে মানুষের স্বীকৃতি, সম্মান ও শ্রদ্ধা অর্জন করতে হবে। আর সেটা সম্ভব কাজের মধ্য দিয়ে। রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলে সবসময় ডাক্তার ও নার্সদের কথা মনে রাখেন। তাই এই পেশাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। নার্সিং পেশার সঙ্গে যুক্তরা সেবার মানসিকতা নিয়ে রোগীদের পরিষেবা প্রদান করলে তারা নিজেরা যেমন আত্মতৃপ্তি লাভ করেন তেমনি রোগীরাও ভরসা পান। তাই এই পেশা খুবই একটি সম্মানজনক পেশা। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২৩ – ২৪ অর্থ বছরে নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটকে আগরতলা গভ. নার্সিং কলেজে উন্নীত করা হয়েছে। এখন বিএসসি নার্সিং, বিডিএস, এমবিবিএস সহ সব ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে রাজ্যে। ত্রিপুরা থেকেই এখন বিভিন্ন কোর্সে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে ছেলেমেয়েরা। উদয়পুরে ৪০ আসন বিশিষ্ট এএনএম নার্সিং প্রতিষ্ঠানকে জিএনএমে উন্নীত করা হয়েছে। আগরতলা দুর্জয়নগরের নার্সিং প্রতিষ্ঠানকে উন্নতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নার্সিং প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এখন ৯টি সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা চালু হয়েছে। ২০২৪ সালে প্রায় ১৫৩ জন নার্সিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য এখন বাইরে থেকেও বিনিয়োগকারীরা রাজ্যে আসছেন। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী টিংকু রায়, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ তপন মজুমদার, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ অঞ্জন দাস, মেডিকেল এডুকেশনের অধিকর্তা ডাঃ এইচ পি শর্মা, ত্রিপুরা নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার রেবিকা ডার্লং সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।