ত্রিপুরা পুলিশে যুক্ত হবে এ.আই ভিত্তিক কন্ট্রোল রুম, ড্রোন, আধুনিক প্রযুক্তি: মুখ্যমন্ত্রী

পুলিশ বাহিনীকে অধিক শক্তিশালী করা এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার উন্নতির জন্য রাজ্য সরকার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে জেলা ও রাজ্য স্তরে এআই-ভিত্তিক কন্ট্রোল রুম, ড্রোন প্রযুক্তি, স্মার্ট সিসিটিভি এবং আধুনিক প্রযুক্তি সহ নতুন প্রযুক্তি চালু করবে রাজ্য সরকার।   বৃহস্পতিবার আগরতলার এডি নগরস্থিত মনোরঞ্জন দেববর্মা স্মৃতি পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘পুলিশ সপ্তাহ প্যারেড-২০২৫’ – এর উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ত্রিপুরা পুলিশ রাষ্ট্রপতি কালার্স সম্মানে ভূষিত। যা আমাদের গর্ব। ত্রিপুরা পুলিশ সারা দেশের মধ্যে একটি বহু পুরনো বাহিনী। আমরা জানি পুলিশ আমাদের সকলের রক্ষাকর্তা। মানুষ যখন অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে তখন পুলিশের কাছে যায়। মাঝেমধ্যে কিছু ঘটনায় কথা উঠে যে রক্ষকই ভক্ষক। যদিও আমি আশা করি এটা ত্রিপুরা পুলিশের ক্ষেত্রে কোন অবস্থায় প্রযোজ্য নয়। ত্রিপুরা পুলিশে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পুলিশকে কাজ করতে হবে। পুলিশের উপর মানুষের যে আস্থা সেটা বজায় রাখতে হবে। মানুষ আশা রাখে যে আইনের শাসনের মাধ্যমে বিচার পাওয়ার। আর সেই আস্থা অর্জন করতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গতকালও বিধানসভার অধিবেশনে পুলিশের হয়ে আমি অনেক কথা বলেছি। আজকের কর্মসূচিতে শহীদ পরিবারগুলির জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় আমি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। মানুষের জন্য কাজ করার যে প্রতিজ্ঞা আপনারা নিয়েছেন সেটা অবশ্যই পালন করতে হবে। আইন শৃঙ্খলা আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। যেকোন রাজ্যের স্ট্যাটাস নির্ভর করে তার আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার উপর। আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ঠিক রাখতে পারলেই আমরা রাজ্যের নাম উজ্জ্বল রাখতে পারবো। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ এ সামগ্রিক অপরাধ ১৯.৩% হ্রাস পেয়েছে। দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থায় নিচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। ২০২৪ সালে ত্রিপুরায় বিগত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম অপরাধের পরিসংখ্যান আমরা দেখতে পাই। বিগত লোকসভা নির্বাচন সহ অন্যান্য নির্বাচনগুলি পুলিশের সঠিক ব্যবস্থাপনায় শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যা খুবই প্রশংসনীয়। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য এবার ত্রিপুরা পুলিশ নির্বাচন কমিশন থেকেও প্রশংসা পেয়েছে। পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২৪ সালে সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ প্রায় ৪৫% কমেছে, শারীরিক অপরাধ ৩৮% কমেছে, দাঙ্গা প্রায় ৭৫% কমেছে, আঘাত ও হামলা ৩৭.২% কমেছে, মহিলাদের উপর অপরাধ ৫৫% কমেছে। রাজ্যের উন্নয়নে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ত্রিপুরা পুলিশ মানুষের জন্য তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জম্পুইজলায় ৭ম ব্যাটেলিয়ন টিএসআর সদর দপ্তরে ১,১৭৩ জন এনএলএফটি ও এটিটিএফ বৈরী গোষ্ঠীর সদস্য অস্ত্র সমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। আর এখন আমরা বলতে পারি সন্ত্রাসবাদ মুক্ত ত্রিপুরা। এনসিআরবি’র রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি লক্ষ জনসংখ্যার নিরিখে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে দেশের মধ্যে ত্রিপুরার স্থান নিচের দিক থেকে ষষ্ঠ স্থানে। সড়ক দুর্ঘটনায় মামলা হয়েছে ২০১৪ সালে ৭১৬ থেকে কমে ২০২৪ সালে ৫৭৮ হয়েছে। এই সময় প্রায় ১৭০ শতাংশ যানবাহন বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও এই হার নিচে নেমে এসেছে। নেশামুক্ত ত্রিপুরা অভিযানে নেশা বিরোধী কার্যকলাপে ত্রিপুরা পুলিশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। গত তিন বছরে এনডিপিএস এ মামলা প্রায় ১,৬৬৬টি এবং ৩,০৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০২৪ সালে প্রায় ৮৬৭ কোটি টাকা মূল্যের নেশা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১০৬% বেশি। নেশামুক্ত ত্রিপুরার অংশ হিসেবে এবং বেআইনি গাঁজা বিরোধী অভিযানে প্রচুর পরিমাণে নেশাদ্রব্য ধ্বংস করছে ত্রিপুরা পুলিশ। এতে ২০২৪ সালে প্রায় ১.৬৪ কোটি গাঁজা গাছ ধ্বংস করা হয়েছে। যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১৩২% বেশি। গত তিন বছরে ১,৫৮৬ কোটি টাকার নেশা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মাদক সংক্রান্ত মামলার তদন্তের জন্য ক্রাইম ব্রাঞ্চের অধীনে এসআইটি গঠন করা হয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা সহ অন্যান্য বিদেশী যারা অবৈধভাবে প্রবেশ করছে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ত্রিপুরা পুলিশ এবং ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস গত তিন বছরে ২৫,০০০এরও অধিক সামাজিক কাজ সংগঠিত করেছে, যার ফলে ৫ লক্ষেরও অধিক মানুষ উপকৃত হয়েছেন। সরকার রেশন ভাতা, ডিএ এবং ইউনিফর্ম ভাতাও বাড়িয়েছে। আগামী দিনগুলিতে, এআই-ভিত্তিক কন্ট্রোল রুম, ড্রোন প্রযুক্তি এবং স্মার্ট সিসিটিভি সহ জেলা এবং রাজ্য স্তরে নতুন প্রযুক্তি চালু করা হবে। সরকার এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কাজ করছে। এর পাশাপাশি একটি নতুন পুলিশ সদর দপ্তর স্থাপন করা হচ্ছে। পূর্ব ও পশ্চিম আগরতলা থানার আধুনিকায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে আমার সাক্ষাতের সময় তিনি পুরনো থানা এবং আবাসিক কোয়ার্টারগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব পি কে চক্রবর্তী, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, গোয়েন্দা শাখার মহানির্দেশক অনুরাগ সহ উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকগণ।  অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা পুলিশের বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। লাইফ টাইম অ্যাচিভার অফ ত্রিপুরা পুলিশ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর কাজল ঘোষ। বছরের সেরা তদন্তকারী অফিসার উত্তর জেলার সাব ইন্সপেক্টর সঞ্জয় মজুমদার, পুলিশ ম্যান অব দ্যা ইয়ার পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা (গ্রামীণ) এডিশনাল এসপি ধ্রুব নাথ, প্রযুক্তির ব্যবহারে সেরা থানা নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স থানা, বিট সিস্টেমের জন্য সেরা থানা ধলাই জেলার কমলপুর থানা, সেরা থানা গোমতি জেলার বীরগঞ্জ থানা ও উত্তর জেলার দামছড়া থানা, বিট সিস্টেমের জন্য সেরা জেলা ধলাই জেলা, প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সেরা ইউনিট কেটিডিএস পুলিশ ট্রেনিং একাডেমি, নরসিংগড়, সেরা টিএসআর ব্যাটেলিয়ন তৃতীয় ব্যাটেলিয়ন টিএসআর, সেরা জেলা গোমতি জেলা, সেরা ক্লারিক্যাল স্টাফ টিএসআর ব্যাটেলিয়ন এনবি/সাব (ক্লার্ক) বিপুল কর্জি, সপ্তম ব্যাটেলিয়ন টিএসআর, সিভিল পুলিশ ইউনিটের সেরা ক্লারিক্যাল স্টাফ উত্তম বিশ্বাস, হেড ক্লার্ক-কাম-অ্যাকাউন্টেন্ট, এসবি।