করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কুকুরের মাংস কেনাবেচায় সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করল নাগাল্যান্ড সরকার। শুক্রবার নাগাল্যান্ডের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের প্রধান সচিব টেমজেন টয় টুইটারে জানিয়েছেন, ‘ব্যবসায়িক স্বার্থে কুকুর কেনাবেচা, বাজারে কুকুরের মাংস বিক্রি এবং কাঁচা ও রান্না করা কুকুরের মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাগাল্যান্ড প্রশাসন। রাজ্য মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।’
সম্প্রতি ডিমাপুরের বাজারে মাংসের জন্য কুকুর বিক্রি হওয়ার ছবি প্রকাশ পেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল হইচই শুরু হয়। কবি, সাংবাদিক তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ প্রীতিশ নন্দী নাগাল্যান্ডের বাজারে কুকুরের মাংস বিক্রি এবং রাজ্যবাসীর একাংশের মধ্যে কুকুরের মাংস খাওয়ার রীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেন। পাশাপাশি, অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মুখ্যমন্ত্রী: নাগাল্যান্ডে কুকুর হত্যা ও খাওয়া নিষিদ্ধ করুন’ শীর্ষক এক আবেদনে সই করার জন্য নেটিজেনদের কাছে আবেদন জানান।
নাগাল্যান্ডের পরিষদীয় মন্ত্রী নেইবা ক্রনু সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, কুকুরের বাণিজ্যিক আমদানি এবং কাঁচা ও রান্না করা কুকুরের মাংস বিক্রিতে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধেই নাগাল্যান্ড সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী। ১৯৬০ সালের পশু হত্যা প্রতিরোধ আইন প্রয়োগ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শুধু কুকুর নয়। বাণিজ্যিক কারণে শুয়োর আমদানিও বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাগাল্যান্ড সরকার। তাদের তরফে বলা হয়েছে, সোয়াইন ফ্লু যে ভাবে ছড়াচ্ছে, সে কারণেই এই পদক্ষেপ করেছে সরকার।
পশু সুরক্ষার জন্য কাজ করা একাধিক সংগঠন নাগাল্যান্ড সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছে। পশুপ্রেমী হিসেবে পরিচিত বাংলার অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও টুইট করে লিখেছেন, “এবার শান্তিতে ঘুমোতে পারব। শান্তি নিয়ে সকালে ঘুম ভাঙবে।”
ভুলে গেলে চলবে না, করোনার উৎসস্থল চিনের উহান প্রদেশে পশু মাংসের বাজার বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে। সেই বাজার দীর্ঘ সময় বন্ধও করেছিল বেজিং। কিন্তু গত জুন মাসেই দেখা গিয়েছে চিনে ১০ দিন ধরে কুকুরের মাংসের মেলা চলেছে। তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। তাছাড়া নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরের বাজারের বীভৎস ছবি সামনে আসার পর একাধিক সংগঠন নাগাল্যান্ড সরকারকে চিঠি লিখেছিল। ফুড প্রোডাক্ট স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড ফুড অ্যাডিটিভস রেগুলেশনস,২০১১-র কথা উল্লেখ করে সেই সংগঠনগুলি কুকুরের মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানায়। তারপর সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে নাগাদের অন্যতম প্রিয় খাদ্য হিসেবে পরিচিত কুকুরের মাংস এবার নিষিদ্ধ করে দিল সেই রাজ্যেরই সরকার।