রাজ্য সরকার সকল ধর্ম ও তাদের সংস্কৃতিকে সবসময় শ্রদ্ধা ও সম্মান করে: মুখ্যমন্ত্রী

রাজ্যে অশান্তির পরিবেশ ছড়ানোর চেষ্টা করা হলে কাউকে বরদাস্ত করা হবে না। এর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। রাজ্য সরকার সকল ধর্ম ও তাদের সংস্কৃতিকে সবসময় শ্রদ্ধা ও সম্মান করে। বৃহস্পতিবার সাব্রুমের রূপাইছড়ি ব্লকের বনকুল মহামুনি মন্দিরে ঐতিহ্যবাহী বনকুল মহামুনি উৎসব ও মেলার উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর, সাব্রুম মহকুমা প্রশাসন এবং মহামুনি ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসব ও মেলার সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, এখানে ধম্মদীপা ইউনিভার্সিটি যাতে দ্রুত গড়ে তোলা যায় সেজন্য রাজ্য সরকার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমি এবিষয়টি নিয়ে আজও সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন এই প্রক্রিয়া প্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। আমি আশা করি এই কাজ দ্রুত ত্বরান্বিত হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আজ এখানে ২৮ টি বুদ্ধ মূর্তি উন্মোচন করেছি। এখানে এসে অনেক কিছু জানতে পারলাম। এধরণের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য খুবই প্রয়োজন। এগুলি আমাদের সংরক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। এসবের উন্নয়ন যে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা আগামীদিনে একটা মাইলফলক হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। এখানে উপস্থিত ভক্তবৃন্দের জন্য আজকের এই ধর্মীয় কর্মসূচি একটা অনুপ্রেরণা ও আনন্দদায়ক মুহূর্ত।

এরকম একটা পবিত্র উৎসবে কোন ধরণের অপবিত্র কাজ বরদাস্ত করবে না আমাদের সরকার। আমি জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে বলবো যাতে মেলা ও উৎসবকে ঘিরে কোন ধরণের অনৈতিক কাজ এখানে না হয়। আমি আশা করি ৫দিন ব্যাপী এই উৎসব শান্তি ও সম্প্রীতির মধ্যে অতিবাহিত হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের রাজ্য সরকার সকল ধর্ম ও তাদের সংস্কৃতিকে সবসময় শ্রদ্ধা ও সম্মান জানায়। আধ্যাত্মিক চেতনা সমৃদ্ধ হলে সম্প্রীতির বন্ধনও সুদৃঢ় হয়। হিংসা, সামাজিক অবক্ষয় হ্রাস পায়, মনও সুন্দর উজ্জ্বল হয়। জীবন থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। শুধু পড়াশুনা করে ভালো ফল করে অনেক কিছু শেখা যায় না। জীবন থেকে শিখতে হয়। ধর্মগুরুদের অমৃত বাণী শুনলে সঠিক দিশায় যাওয়া যায়। ভগবান বুদ্ধের জীবন ও আদর্শকে আমরা যদি সমাজে আরো ছড়িয়ে দিতে পারি তবে সেটা মানুষের কল্যাণে লাভজনক হবে। ভগবান বুদ্ধ বলেছেন অহিংসা পরম ধর্ম। মানুষকে যদি ভালবাসা যায় তবেই আমরা একটা সুস্থ সমাজ তৈরি করতে পারি। এত বছর পর আজকের দিনেও উনার বাণী সমান প্রাসঙ্গিক।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার এই মহামুনি বৌদ্ধ বিহার একটি খুবই পবিত্র তীর্থস্থান। আমি শুনেছি এখানে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ দর্শনার্থী নিয়মিত আসেন। আর শুধু এখানেই নয়, দেশ বিদেশের বহু মানুষের কাছে এটি একটি সুপরিচিত স্থান। এখানে মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অংশের মানুষ বসবাস করেন। মগ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি আমাদের রাজ্যের একটা অন্যতম সংস্কৃতি হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেছে। এই জায়গা ধর্মীয় পর্যটনের অন্যতম আদর্শ ক্ষেত্র। বহু জায়গা থেকে পর্যটকরা এখানে ঘুরতে আসেন। এতে ব্যবসার উন্নয়নের পাশাপাশি এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। তবে এখানে থেমে না থেকে আরো কিভাবে সারা বিশ্বময় এই ধর্মীয় পর্যটনের সম্ভাবনাকে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সেই প্রচেষ্টা রাখতে হবে। এই ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রকে আরো কিভাবে আকর্ষণীয় করা যায় এবিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ও পর্যটন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা।  অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মাইলাফ্রু মগ, এমডিসি কংজং মগ, দক্ষিণ ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি দীপক দত্ত, ড. ধম্ম প্রিয়া, রূপাইছড়ি বিএসি চেয়ারম্যান রাখী ত্রিপুরা, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক স্মিতা মল, সাব্রুমের মহকুমা শাসক শিবজ্যোতি দত্ত সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রদর্শনী স্টলও খোলা হয়। এছাড়াও প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকছে স্থানীয় ও বহিরাজ্যের শিল্পীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পাঁচদিনব্যাপী এই মেলা চলবে আগামী ১৭ মার্চ পর্যন্ত।