উত্তর জেলার ধর্মনগর থেকে উনকোটি জেলার কৈলাশহরের সাথে সংযুক্তকারী আরও একটি রেলপথ পেতে চলেছে ত্রিপুরা। এর পাশাপাশি আগরতলার গুর্খাবস্তিতে নির্মীয়মান রাজ্যের সবচেয়ে উঁচু ভবনে এক ছাদের নিচে হতে চলেছে সমস্ত দপ্তরের অধিকর্তার কার্যালয়। মঙ্গলবার উনকোটি জেলার কৈলাশহরের চণ্ডিপুর ব্লক প্রাঙ্গনে ১৬২ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। মূলত, পরিকাঠামো উন্নয়ন সহ প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে এদিন একইসঙ্গে এসকল প্রকল্পের সূচনা করা হয়। উদ্বোধকের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ কৈলাশহরের জনগনের জন্য একটা আনন্দের মুহূর্ত। কিছুদিন আগে বিশালগড়ের পূর্ব লক্ষ্মীবিলে এলিমকো অক্সিলিয়ারি প্রোডাকশন ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ভূমিপুজন অনুষ্ঠানে আমি গিয়েছি। উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে প্রথম বারের মতো এই সেন্টারে কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি করা হবে। আর এসব উপকরণ শুধু ত্রিপুরার জন্য নয়, উত্তর পূর্বের সব জায়গায় সরবরাহ করা হবে। এভাবেই আমাদের ত্রিপুরায় একটার পর একটা উন্নয়নের পালক যুক্ত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর পূর্বাঞ্চলকে আরো স্বনির্ভর করে তোলার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আর সেদিনই আমি আগরতলায় মহকুমা শাসক কার্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। অথচ বিরোধীরা নাকি আমাদের উন্নয়ন দেখতে পান না।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন উত্তর পূর্বাঞ্চল যদি উন্নত না হয় তবে ভারতও উন্নত হবে না। সেই দিশায় কাজ করছেন তিনি। ২০১৮ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী এসে বলে গিয়েছিলেন একবার ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার আপনারা এনে দিন, আমি আপনাদের হিরা মডেল দেব। আর সেই কথা রেখে আমাদের হিরা মডেল দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে ত্রিপুরায় জাতীয় সড়ক, দ্রুতগতির ইন্টারনেট, রেলওয়ে, এয়ারওয়ের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। আগরতলার এয়ারপোর্ট উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যতম সুন্দর এয়ারপোর্ট হয়েছে। ত্রিপুরার মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের নামে আমরা এয়ারপোর্টের নামকরণ করেছি। রাজ্যের উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তারা অনুমোদন দিয়ে দেন। আমাদের ৬টি জাতীয় সড়কের কাজ প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আরো ৪টি জাতীয় সড়কের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডাবল ইঞ্জিন সরকার থাকার কারণেই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব। উন্নয়নের জন্য শান্তি ও আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক থাকা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, রাজ্যের স্বচ্ছ প্রশাসন এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের কারণে এখন ত্রিপুরায় আসছেন অনেক বিনিয়োগকারী। কিছুদিন আগেও আমরা ইনভেস্টর সামিট করেছি, যেখানে প্রায় ৮৭ জন বিনিয়োগকারী বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিল্প স্থাপনের জন্য ৩,৭০০ কোটি টাকার মৌ স্বাক্ষর করেছেন। এমন সম্ভাবনা আগে কখনও দেখা যায়নি। জিএসডিপির ক্ষেত্রে ত্রিপুরা এখন উত্তর -পূর্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। আমরা এমএসএমইগুলির মাধ্যমে শিল্প ক্ষেত্রের উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সাথে বৈঠকের সময় তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে রেলপথের পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ অব্যাহত থাকবে এবং তিনি নিশ্চিত করেছেন যে ধর্মনগর থেকে কৈলাশহর পর্যন্ত আরও একটি রেলপথের ট্র্যাক খুব শীঘ্রই শুরু করা হবে। মানুষ আমাদের বিশ্বাস করেছে এবং দ্বিতীয়বারের জন্য আমাদের ক্ষমতায় এনেছে। আমাদের সরকার সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছে। যেখানে পূর্ববর্তী সরকার সমস্যা তৈরি করতো।
ডাঃ সাহা বলেন, আমরা ১৩৪ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে গুর্খাবস্তিতে ত্রিপুরায় সবচেয়ে উঁচু ভবন নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছি। যেখানে সমস্ত দপ্তরের অধিকর্তাদের কার্যালয় এক ছাদের নীচে আসবে। এই বহুতল ভবনটি জি+১৪ বিশিষ্ট হতে যাচ্ছে। এদিন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী টিংকু রায়, উনকোটি জেলার সভাধিপতি অমলেন্দু দাস, টিআইডিসির চেয়ারম্যান নবাদল বণিক, ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান মবস্বর আলি, উনকোটি জেলার জেলাশাসক ডি কে চাকমা, পুলিশ সুপার কান্তা জাহাঙ্গীর এবং সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা তপন কুমার দাস সহ অন্যান্য আধিকারিকগণ। এদিকে কৈলাশহর অবস্থান কালে গত ৮ মাস পূর্বে একটি দূর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনায় মৃত চন্ডীপুর বিধানসভা এলাকার চা শ্রমিক রামজয় পালের পরিবারের পাশে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী। আজ চন্ডীপুর সফরকালে হতভাগ্য পরিবারটির সাহার্যার্থে ৯,০৭,৮৭৫ টাকা অর্থরাশি সম্বলিত চেক তুলে দেন তিনি। এর পাশাপাশি ঈশ্বরের নিকট তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনদের এই কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার শক্তি প্রদান করার জন্য প্রার্থনা করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা।