খেলো ত্রিপুরা, সুস্থ ত্রিপুরা প্রকল্পের অধীনে নেশামুক্ত ত্রিপুরা নামে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করছে রাজ্য সরকার: মুখ্যমন্ত্রী

২০১৮ সালের আগে রাজ্য নেশাযুক্ত ত্রিপুরা ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে বর্তমানে সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নেশামুক্ত ত্রিপুরায় পরিবর্তিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশনা অনুসারে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। সোমবার রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। ‘নেশামুক্ত রাজ্য গঠনে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে’ বিধায়ক নির্মল সরকার ও বিধায়ক নয়ন সরকারের আনীত নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন তিনি। এবিষয়ে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, রাজ্যে বিভিন্ন নেশা সামগ্রী ব্যবহারের ব্যাপকতায় রাজ্যের জনমানসে বিশেষত ছাত্র ও যুবসমাজে এর ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করে রাজ্য সরকার গুরুত্ব সহকারে নেশা বিরোধী অভিযান ব্যাপকভাবে শুরু করে। এই অভিযানের ফলে রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে বেআইনী নেশা সামগ্রী যেমন – গাঁজা, কফসিরাপ, নেশার টেবলেট, হেরোইন ইত্যাদি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে গাঁজা গাছ ধংস করা সহ সংশ্লিষ্ট মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি, সহযোগী ও নেশাদ্রব্য চালানকারীদের গ্রেপ্তার করেছে। তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় এনডিপিএস মামলায় প্রচুর সংখ্যায় অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়েছে। ২০২২ সালে ৫৬২টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৭৫৯ জন। ২০২৩ সালে ৬৩৩টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ১০৫২ জন। ২০২৪ সালে ৪৭০টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৮৮৬ জন অভিযুক্ত। ৩ বছরে মোট ১,৬৬৫টি মামলায় ২৬৯৭ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর এই সময়কালে অর্থাৎ ৩ বছরে রাজ্য পুলিশের হাতে বাজেয়াপ্ত নেশাসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে – গাঁজা ১,৫৪,৬৫৮ কেজি, কফ্-সিরাপ ৫,৮২,১০০ বোতল, ২৫,৬২,৭৯১টি ট্যাবলেট, হেরোইন ৩৪,৯৭১ গ্রাম, ধ্বংসকৃত গাঁজার চারার সংখ্যা ২,৪৫,৯১,২৫৮টি। আর গাড়ি সহ বাজেয়াপ্ত করা নেশা সামগ্রীর মূল্য ১,৫৮৭ কোটি ৪৭ লক্ষ ৪১ হাজার ৭৬২ টাকা। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পরিমাণে গাঁজা গাছ ও চারা ধ্বংস করেছে রাজ্য পুলিশ। যা বাজারমূল্যের হিসেবে বাজেয়াপ্ত নেশাসামগ্রীর পরিমান প্রায় দ্বিগুনের অধিক (১০৬ শতাংশ)।

সভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় এবং ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের নির্দেশানুসারে রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তর সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তর, স্বরাষ্ট্র দপ্তর, শিক্ষা দপ্তর, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তর, নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো এবং বিভিন্ন এন.জি.ও-দের সহায়তায় একটি স্টেট লেভেল নেশামুক্ত ভারত ক্যাম্পেন কমিটি ও বিভিন্ন জেলায় ডিস্ট্রিক্ট লেভেল নেশামুক্ত ভারত ক্যাম্পেন কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার উদ্দেশ্য নেশার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা এবং তার প্রতিরোধের বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা। রাজ্যে নেশা দ্রব্য ব্যবহারের লাগামহীন বৃদ্ধি এবং সেটা থেকে উত্তরনের লক্ষ্যে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তর ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ‘খেলো ত্রিপুরা, সুস্থ ত্রিপুরা প্রকল্পের অধীনে নেশামুক্ত ত্রিপুরা নামে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করে। যার মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি ব্লক, মহকুমা, জেলা, পৌরসভা, নগরপঞ্চায়েত এবং ক্লাবগুলিতে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করা হয়। এছাড়াও প্রতিটি এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় এবং ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের নির্দেশানুসারে নবচেতনা মডিউলের দ্বারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করছে শিক্ষা দপ্তর। যাতে ছাত্রছাত্রীদের নেশার প্রতিরোধমূলক শিক্ষা প্রদান করা যায়। এছাড়া ত্রিপুরা স্টেট এইডস্ কন্ট্রোল সোসাইটি কুমারঘাট, কৈলাশহর, দামছড়া, আমবাসা, জিরানিয়া ও জম্পুই এর মতো জায়গায় ওপিওড সাবস্টিটিউশন থেরাপি (OST) সেন্টার চালু করেছে। সম্প্রতি ভাটি অভয়নগরে এরকম একটি সেন্টার চালু করা হয়েছে। এর পাশাপাশি রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক এবং নিউ দিল্লিস্থিত এইমস্ এর আর্থিক সহায়তায় নরসিংগড়স্থিত আধুনিক মানসিক (মডার্ন সাইক্রিয়াটিক) হাসপাতালে ২০১৯ সালের আগষ্ট মাসে ড্রাগ ট্রিটমেন্ট ক্লিনিক (DTC) নামে একটি ডেডিকেটেড ওপিডি ভিত্তিক আসক্তি ক্লিনিক খোলা হয়েছে। এই কেন্দ্র বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করে থাকে। এই হাসপাতালের ডি-এডিকশন সেন্টারে নেশা আসক্তদের চিকিৎসার সুবিধা অর্থাৎ এডিকশন ট্রিটমেন্ট ফ্যাসিলিটি (ATF) চালু হয়েছে। রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও একই ধরণের সুবিধা চালু করার প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন, ত্রিপুরার উদ্যোগে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে নেশা মুক্ত ত্রিপুরা প্রচারাভিযান চালু করা হয়। এনএসএস ত্রিপুরা শাখা এই অভিযানে ত্রিপুরার মোট ২২টি সাধারন ডিগ্রী কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়েও মাদকাসক্তি সম্পর্কিত মেগা সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করেছে। এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, কাউন্সিলিং এবং টেস্টিং এর জন্য রাজ্যের ২৪টি হাসপাতালে ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সিলিং এন্ড টেস্টিং সেন্টার, ১৩৩টি হাসপাতালে ফেসিলিটি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সিলিং এন্ড টেস্টিং সেন্টার, ৩টি পিপিপি-আইসিটিসি এবং একটি মোবাইল ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সিলিং এন্ড টেস্টিং সেন্টার ভ্যান কাজ করছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মোতাবেক যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর রাজ্য স্তরের ক্যুইজ কম্পেটিশন, ব্যান্ড মিউজিক কম্পিটিশনের এবং রেড রান নামক ম্যারাথন এর আয়োজন করা হয় রাজ্যে। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এবং বেসরকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নেশা বিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়ে থাকে। এই প্রচারাভিযানে সাধারণ মানুষকেও যুক্ত করা হচ্ছে। এভাবেই মাদক ব্যবহারের প্রবণতা হ্রাস করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং তার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। এতে রাজ্যের মানুষ শান্তির পরিবেশে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রতিপালন করতে পারছেন।