যত সময় এগোচ্ছে তত আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে আসামের বন্য পরিস্থিতি। যত দিন যাচ্ছে ততই যেন এই রাজ্যের দুর্যোগের কালো মেঘ আরো ঘন হচ্ছে। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া নদীর প্লাবন, অন্যদিকে একনাগাড়ে বৃষ্টি, উত্তর-পূর্বের অসম এখন যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুপুরী। বন্যা কবলিত এই রাজ্যে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে কোনো না কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা। গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়ে যাওয়ার কারণে ঘরছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষ। এমতাবস্থায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
এরই মধ্যে সোমবার সকালে জানা গেল বন্যা পরিস্থিতির জেরে জমা জলে ডুবে চার শিশুসহ আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে অসমে। এই নিয়ে চলতি বছরে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১২৬ এ। মৃতদের মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে শুধুমাত্র ভূমিধসের কারণে। বাকিদের মধ্যে কেউ জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছেন, কেউবা আবার জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন। এক কথায় বলতে গেলে যত দিন যাচ্ছে ততই আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে অসমের বন্যা।
জানা যাচ্ছে এই মুহূর্তে সবথেকে খারাপ অবস্থা বরপেটা, কাছার, দারাং, করিমগঞ্জ ও মরিগাঁওয়ে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই জেলাগুলিতে একজন করে মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এই সমস্ত জেলার প্রায় ২২ লক্ষেরও বেশি মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অসমের দুর্গত জেলাগুলির মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বরপেটা। সেখানে প্রায় সাত লক্ষ মানুষ এই মুহূর্তে এই বন্যার কারণে গৃহহীন।
এছাড়া নগাঁওয়ে পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষ দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন। কাছারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই লক্ষেরও বেশি মানুষ। অন্য দিকে, অসমের শিলচর শহরও ক’দিন ধরে জলবন্দি অবস্থায় রয়েছে। রবিবার শিলচরের বিভিন্ন এলাকা উদ্ধারকারীদের বোটে করে পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি।
এর পাশাপাশি জানা যাচ্ছে বন্যার জলে এই রাজ্যের প্রায় ৭৬ হাজার ৭০৬ হেক্টর ফসল ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আগে যা ছিল আশার সবুজ ধানক্ষেত এখন সেটাই হতাশার সাগরে পরিণত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসমের জেলাগুলো হল বাজালি, বাকসা, বরপেটা, বিশ্বনাথ, কাছাড়, চিরাং, দররাং, ধেমাজি, ধুবরি, ডিব্রুগড়, ডিমা হাসাও, গোয়ালপাড়া, গোলাঘাট, হাইলাকান্দি, হোজাই, কামরুপ, কামরুপ মেট্রোপলিটন, কার্বি আংলং পশ্চিম, করিমগঞ্জ, লাকপুর, লাউ। মাজুলি, মরিগাঁও, নগাঁও, নলবাড়ি, সোনিতপুর, দক্ষিণ সালমারা, তামুলপুর এবং উদালগুড়ি।