ঘূর্ণিঝড় যশের কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে জমির ধান। এমনটাই আশঙ্কা করে ধান কেটে জমি পারে মজুত করে রেখেছিলেন চাষীরা। কিন্তু মালদায় ঝড়ের থেকেও বেশি হল বৃষ্টি। আর সেই বৃষ্টিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেল মজুত রাখা চাষীদের কাটা ধান। পুরাতন মালদা ব্লকের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কাটা ধান বৃষ্টির জলে ভেসে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন চাষিরা।
শুক্রবার সকাল থেকে কেউ কেউ খাল বিলের মধ্যে নেমেই ভেজা ধান কোনরকমে উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। পুরাতন মালদা ব্লকের মহিষবাথানি এবং যাত্রাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতে মূলত বেশি ধান চাষ হয়ে থাকে। আর এখানেই বেশি করে ক্ষতির মুখে পড়েছে ধানচাষীরা। যারা ঝড়ের কারণে আগাম জমি থেকে বোরো ধান কেটে মজুত করে রেখেছিলেন, সেই ধান টানা বৃষ্টির জেরে জলে তলিয়ে গিয়েছে। মনকে মন ধান আবার ভেসে এক জায়গা থেকে অন্যত্র। যার ফলে চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ধানের লোকসানের ক্ষয়ক্ষতি কিভাবে মেটাবেন তা অবশ্য ভেবে কূলকিনারা করতে পারছেন না ওই দুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শতাধিক চাষীরা। তাঁদের বক্তব্য, ধানে প্রচুর টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসন যদি সহযোগিতা না করে তাহলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে।
অন্যদিকে পুরাতন মালদা পুরসভার কুড়ি টি ওয়ার্ড এখনো টানা বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে ১,২, ৭,৮,৯,১০,১৩,১৬ নম্বর ওয়ার্ড গুলি। শুক্রবার সকালে জলমগ্ন ওয়ার্ডগুলো পরিদর্শন করেন পুরসভার প্রশাসক কার্তিক ঘোষ। বিভিন্ন ওয়ার্ডে জেনারেটর আবার কোথাও পাম্প মেশিন বসিয়ে জল নিকাশি ব্যবস্থা করা হয় পুরসভার পক্ষ থেকে। নিম্নচাপের ফলে বৃহস্পতিবার টানা বৃষ্টিতে এখনও ডুবে রয়েছে পুরাতন মালদা পুরসভার পারাসামুন্ডি, চৌধুরীপাড়া, দেবীপুর কলোনি, কর্মকারপাড়া, ফুটানি মোর, খৈহাটটা সহ একাধিক এলাকা। সকাল থেকে এই সব এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে উনুন জলে নি। বৃষ্টির প্রায় ১২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ওইসব এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাড়ি থেকে জল নিকাশের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন. নষ্ট হয়েছে বাড়ির আসবাবপত্র থেকে বহু জিনিস। অনেকে তো আবার জলমগ্ন বাড়ির তালাবন্দি করে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুরসভা ও প্রশাসনের সহযোগিতা চাইছেন জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দারা।
পুরাতন মালদা পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফুটানি মোর এলাকার জলবন্দি বাসিন্দাদের বক্তব্য, বৃহস্পতিবার যেভাবে বৃষ্টি হয়েছে , তাতে ওইদিন বিকাল থেকেই ঘরবাড়ি জলে ভরে গিয়েছে। কোনোরকমে লোকের বাড়ির বারান্দা ও অন্য জায়গায় আশ্রয় নিয়ে রয়েছি। ঘরের বিছানাপত্র থেকে শুরু করে নানান আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কী করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
অন্যদিকে পুরাতন মালদা ব্লকের মহিষবাথানি এবং যাত্রাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধান চাষীদর বক্তব্য, “ঘূর্ণিঝড় যশের তাণ্ডবের ভয়ে আমরা ধান কেটে জমির আশেপাশে মজুত করে রেখেছিলাম। কিন্তু বৃহস্পতিবার যেভাবে একটানা বৃষ্টি হলো তাতে কাটা ধান ভাসিয়ে নিয়ে গেছে অন্যত্র। লোকসান তো হলোই। এখন কিভাবে সেই ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। ধান নষ্ট হয়েছে, টাকাও জলে গেল।” এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত প্রশাসনের সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ ধান চাষীরা।
মহিষবাথানি এবং যাত্রাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রোজিনা বিবি ও নুর হক বলেন, “বৃহস্পতিবার ঝড় বৃষ্টিতে চাষীদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরির বিষয়ে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। যেসব চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় সেকথাও আমরা কৃষি দপ্তর ও প্রশাসনকে জানিয়েছি।”
এদিকে পুরাতন মালদার পুরসভার প্রশাসক কার্তিক ঘোষ বলেন, যেভাবে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে পুরসভা এলাকার কুড়িটি ওয়ার্ড কমবেশি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। সেইসব ওয়ার্ডের কোথাও কোথাও পাম্প মেশিন, জেনারেটরের মাধ্যমে জল নিকাশির কাজ শুরু করা হয়েছে। অনেকেই জল বন্দি রয়েছেন। সেইসব মানুষদের উদ্ধার করে আশেপাশের সরকারি-বেসরকারি স্কুলগুলিতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে জল নিকাশির কাজ চলছে। পাশাপাশি যারা স্কুলগুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন পুরসভার পক্ষ থেকে তাদের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।