আজ ফাল্গুন মাসের তেরো তারিখ। উত্তরবঙ্গের জনসমাজে প্রচলিত রয়েছে যে ফাল্গুনের এই তেরো তারিখে বিদায় নেয় শীতকাল। তাই শীতের বিদায় বার্তা জানিয়ে উত্তরবঙ্গের বৃহৎ জনগোষ্ঠী রাজবংশী-কামতাপুরি মানুষরা এই ত্যারেয়া উৎসব পালন করে । আঞ্চলিক কথন ভঙ্গিতে এই উৎসবের নাম কোথাও ত্যারেয়া বা ট্যারেয়া উৎসব।জানা যায় ফাল্গুনের এই তেরো তারিখে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষেরা পুর্বপুরুষদের নিয়ম নীতি মেনে বাড়ির পাশে ফাঁকা মাঠে কলা গাছের ঢোনার একটি পাত্রে ফুল,ফল, ধুপ,ধুনা সাজিয়ে এক বালতি জল নিয়ে যায় তেরেয়া পুজা করতে।এই পূজোতে মাদার গাছের ফুল ব্যবহৃত হয় বলে জানা যায়। পুজার শেষে সেই পাত্রটি কোন এক জায়গায় রাখার পর সেখানে শীতকে বিদায় দেয় পুজার মধ্য দিয়ে। এর পর সেই বালতি বোঝাই জল নিজের গায়ে দিয়ে বাড়িতে আসে ও শীতকে বিদায় দেওয়া হয় বলে তারা মনে করে ও গ্রীষ্মের আগমনকে অনুভব করতে শুরু করে।বালতি ভর্তি জল নিজেদের গায়ে ঢেলে শীতকে বিদায় জানিয়ে বাড়ি ঢোকে। এর পাশাপাশি বাড়ির গবাদি পশুদেরও এদিন স্নান করানো হয়। মূলত বাড়ির ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা এই লোকাচার উৎসব পালন করতে দেখা যায়। শোনা যায় এই উৎসবকে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গের জনমানসে একসময় প্রবল উম্মাদনা দেখা যেত। এই ত্যারেয়া উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামের মানুষরা রাতে একজায়গায় মিলিত হয়ে রাখাল সেবা বা সহভোজের ব্যবস্থা করত। তবে বর্তমানে বিশ্বায়নের এবং কর্মব্যস্ততার যুগে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে উত্তরের এই লোকাচার। তবুও কিছু কিছু জায়গায় এখনো এই উৎসব পালিত হচ্ছে।