চিকিৎসার অভাবে দ্বিতীয় কোনও ‘শুভ্রজিৎ’-এর মৃত্যুও চায় না রাজ্য। রোগীর রেফার প্রশ্নে এবার আরও কঠোর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ উঠলেই কড়া দাওয়াই।
শো-কজ, সাসপেন্ড। এমনকী ক্লিনিক্যাল এসট্যাবলিসমেন্ট আইন প্রয়োগ করে অভিযুক্ত হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে স্বাস্থ্য দপ্তর। সে ক্ষেত্রে পার পাবে না কেউই। সরকারি হাসপাতাল কিংবা বেসরকারি হাসপাতাল—সবার ক্ষেত্রেই একই নিয়ম। আবার বাছবিচার চলবে অসুখের ক্ষেত্রেও। কোভিড-পজিটিভই হোক বা স্ট্রোক কিংবা অন্য অসুখ। রোগীকে চিকিৎসা না করে রেফার করলেই জুটবে শাস্তি। খুব শীঘ্রই এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ একটি ‘গাইড লাইন’ও প্রকাশ করতে চলেছে স্বাস্থ্য ভবন।
শুক্রবার ইছাপুরের যুবক শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয় কলকাতা মেডিক্যাল হাসপাতালে। তার আগে তাকে নিয়ে অন্তত চারটি হাসপাতালে ঘুরতে হয় মা-বাবাকে। উত্তর শহরতলি থেকে কলকাতা। কোথাও ঠাঁই হয়নি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শুভ্রজিতের। শেষে তার মা’য়ের আত্মহত্যার হুমকিকে শুভ্রজিৎকে ভর্তি নেয় কলকাতা মেডিক্যাল। চিকিৎসাও শুরু হয়। ইমার্জেন্সিতে তাঁকে স্থিতিশীল করার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় সিপিআর ইউনিট। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। মারা যায় শুভ্রজিৎ। হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে এক অসহায় মা’য়ের বিলাপ নাড়িয়ে দিয়েছিল রাজ্যবাসীকে। কাঁদতে কাঁদতে শুভ্রজিতের মা শ্রাবণী বলছিলেন, হাসপাতালগুলি আমাদের সাহায্য করল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমার ছেলেকে বাইরে ফেলে রাখল। ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে আমার ছেলে বেঁচে যেত। তাঁর অভিযোগ, ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। শুভ্রজিতের ময়নাতদন্ত করা হোক জানিয়ে তাঁর মা দোষীদের শাস্তির দাবি তুলেছেন। হাতে লেখা করোনা পজিটিভ রিপোর্ট নিয়ে বেলঘরিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শ্রাবণীদেবীর প্রশ্ন, মিডল্যান্ড নার্সিংহোম কী করে তিন মিনিটে কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট দিতে পারে? বাকি হাসপাতালগুলো কী করে ওই হাতে লেখা রিপোর্টকে মান্যতা দিয়ে একজনকে কোভিড হাসপাতালে পাঠাল? স্বাস্থ্যদপ্তরের নির্দেশিকা অমান্য করে বেড থাকা সত্ত্বেও কেনই বা রোগী ফেরানো হচ্ছে?
সূত্রের খবর, এমন ঘটনায় ঘনিষ্ঠমহলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের একাধিক সূত্রে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবরও নেন তিনি। এরপর তাঁরই নির্দেশে স্বাস্থ্যসচিব এবং দুই স্বাস্থ্য অধিকর্তা জরুরি বৈঠকে বসেন। বেলাগাম হয়ে ওঠা রেফার প্রক্রিয়াকে বাগে আনতেই ওই বৈঠক। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, এবার আর রেফার নিয়ে অনুরোধ-উপরোধ, সরকারি নির্দেশিকা জারিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না সরকার। নেওয়া হবে চটজলদি কঠোর ‘অ্যাকশন’ও। সেই ‘অ্যাকশন’-এর মধ্যে থাকছে অভিযুক্ত হাসপাতাল, নার্সিংহোম বা কর্তব্যরত চিকিৎসককে শো-কজ, সাসপেন্ড। প্রয়োজনে ক্লিনিক্যাল এসট্যাবলিসমেন্ট আইন প্রয়োগ। সে ক্ষেত্রে উক্ত হাসপাতালের লাইসেন্স পর্যন্ত বাতিল করতে পিছপা হবে না রাজ্য।