নির্বাচনের মুখে দল বিরোধী কাজের অভিযোগে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ চার জন দলীয় নেতাকে বহিষ্কার করলো কালিয়াচক ২নং ব্লক তৃণমূল কমিটি। সোমবার রাতে কালিয়াচকের ধরমপুর এলাকার একটি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৃণমূলের ব্লক কমিটির নেতারা রেজুলেশন ডেকে দলের এই চার নেতাকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সাফ কথা, নির্বাচনের মুখে ওই চার নেতানেত্রী টাকার বিনিময়ে বিরোধীদের সাথে গাঁটছাড়া বেঁধে কাজ করেছে। এমনকি মোথাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিনকে যেন তেন প্রকারে পরাজিত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আর তার জন্যই এব্যাপারে কালিয়াচক ২নং ব্লক কমিটির তৃণমূল নেতৃত্ব বৈঠক ডেকে স্থানীয় এলাকার নেতা-নেত্রীকে বহিষ্কার করেছে। এব্যাপারে রেজুলেশন নিয়ে বিষয়টি জেলা নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি মোথাবাড়ি কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকেও পুরো বিষয়টির সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে। আগামীতে বহিস্কৃত চার নেতানেত্রী যাতে কোনোভাবেই দলে যোগ না দিতে পারেন সে ব্যাপারেও দলের জেলা নেতৃত্বকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে কালিয়াচক ২নং তৃণমূল ব্লক কমিটি।
সোমবার সন্ধ্যায় কালিয়াচক ২নং ব্লকের ধরমপুর এলাকার একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অধীর দাসের নেতৃত্বে দলীয় বৈঠক ডাকা হয় । সেখানেই স্থানীয় ৪ নেতা নেত্রীর বিরুদ্ধে দল বিরোধী কাজের নানান অভাব-অভিযোগের বিষয়টি উঠে আসে।
তৃণমূলের কালিয়াচক ২নং ব্লক সভাপতি সুধীর দাস বলেন, যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে তারা হলেন কালিয়াচক ২নং ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি টিংকু রহমান বিশ্বাস , জেলা পরিষদের সদস্য চম্পা মন্ডল (বিদ্যুৎ কর্মদক্ষ), তার স্বামী দ্বিজেন মন্ডল, হামিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, জুলেখা বিবি, এবং গঙ্গাপ্রসাদ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান আমিনুল ইসলাম।
যদিও বহিস্কৃত নেতা-নেত্রীদের দাবি, তাদেরকে না জানিয়ে এই ধরনের কোন কিছু করা যায় না।
তৃণমুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বিধানসভা ভোট শেষ হয়েছে। আর এরপর থেকে বিধানসভা ভিত্তিক পর্যালোচনা শুরু করেছে তৃণমুল নেতৃত্ব। এনিয়ে ব্লক নেতৃত্বদের নিয়ে মিটিং হয় মালদার মোথাবাড়ির ধরমপুর এলাকার একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এই মিটিংয়ে নেতৃত্ব দেন কালিয়াচক ২নম্বর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক প্রেসিডেন্ট সুধীর দাস।
তিনি অভিযোগ তোলেন, ভোটের সময় এই চারজন অন্য দলের সঙ্গে টাকার লেনদেন করে এবং অন্য দলের হয়ে ভোট করছিল বলে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি জেলা নেতৃত্বকে লিখিত ভাবে জানান, যেহেতু আমাদের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন দলের জেলা কোঅর্ডিনেটর রয়েছেন, তাই এ বিষয়ে তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
এদিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের মধ্যে জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধক্ষ্যের স্বামী দ্বিজেন মন্ডল বলেন, আমি জেলা কমিটির সদস্য। কোন নোটিশ না জানিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ব্লক নেতৃত্ব। যে প্রেসিডেন্ট বানান লিখতে পারে না তিনি বহিস্কার করতে পারে। আমি সমস্ত টা জেলা সভাপতিকে জানিয়েছি।
অপরদিকে কালিয়াচক ২নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি টিঙ্কুর রহমান বিশ্বাস বলেন, শোকজ না করে বহিস্কার করা যায় না। আমাকে কোন শোকজের চিঠি দেয় নি। আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি এই ভাবে বহিস্কার করতে পারে না। আমি বিষয়ে জেলা নেতৃত্ব ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা সাংসদ মৌসুম নূর জানিয়েছেন, কালিয়াচক ২নং তৃণমূল ব্লক কমিটির বৈঠকে কয়েকজন নেতা-নেত্রীকে বহিষ্কারের একটা সিদ্ধান্তের বিষয় আমি শুনতে পেয়েছি। বিষয়টি আমার কাছে এখনও লিখিত আকারে আসেনি। তবে এ ব্যাপারে অবশ্যই দলগতভাবে পর্যালোচনা করে দেখা হবে।