চিকিৎসার গাফিলতিতে প্রসূতির মৃত্যু ,ভাঙচুর সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে

চিকিৎসার গাফিলতিতে প্রসূতির মৃত্যু এবং সদ্যোজাত সন্তানের বদল করে দেওয়ার মতো চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠল কোচবিহারের এক হোমের বিরুদ্ধে। এর ফলে মৃতের আপনজন এবং উত্তেজিত জনতা ওই সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ময়দানে নামতে হলো কোচবিহার কোতোয়ালি থানার বিশাল পুলিশবাহিনীকে।

অভিযোগ, ডিসেম্বর মাসের ৩০তারিখ এই মাতৃমা-তে নিজের প্রসূতি স্ত্রীকে ভর্তি করেন কোচবিহার ১নং ব্লকের চিলকিরহাট এর বাসিন্দা সুখমন্ত বর্মন। প্রায় ৫ঘন্টা তার স্ত্রীকে চিকিৎসাহীন হিসেবে ফেলে রাখা হয় সংশ্লিষ্ট এই মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবে। এদিন বেলা ৩টা নাগাদ প্রসব হয় তার স্ত্রীর। এরপর তাকে জানিয়ে দেওয়া হয় তার সদ্যোজাত আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মধ্যেই তার স্ত্রীর বেডে এক সদ্যোজাতকে রেখে দেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আশ্চর্যজনক ভাবে দেখা যায় তার প্রসূতি স্ত্রীর নম্বর ৮৪৬ অথচ সদ্যোজাতের নম্বর রয়েছে ৮৪৭ এবং পরবর্তীতে এই সদ্যোজাতকে আবার সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরে তাকে জানানো হয় তার সদ্যোজাত মারা গেছে। এই ঘটনায় হতচকিত হয়ে পড়েন সুখমন্ত বর্মন। এই মাতৃমা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কার্যত সদ্যোজাত বদলের অভিযোগে সোচ্চার হন তিনি। তার এই ক্ষোভ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে।

এর পাশাপাশি চিকিৎসার গাফিলতিতে আরেক প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসে এদিন। কোচবিহার ১নং ব্লকের সুকটাবাড়ি কলাবাড়িঘাট এলাকার বাসিন্দা ২১ বছরের প্রসূতি খাদিজা বিবিকে রবিবার ভর্তি করা হয় এই মাতৃমা- তে। সোমবার তার সিজার করেন চিকিৎসকরা। অভিযোগ সিজারের পর থেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন খাদিজা বিবি। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে একবারের জন্য দেখতে আসেননি। শুধু তাই-ই নয়, কর্তব্যরত নার্সরাও তাদের দায়িত্ব পালন করেননি।

খাদিজা বিবির মায়ের অভিযোগ, শুক্রবার সকাল ৮টা নাগাদ তার মেয়েকে একটি ট্যাবলেট খাওয়ান কর্তব্যরত নার্সরা এবং এরপরই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।এর কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তার মেয়ে।

একদিকে সদ্যোজাত বদল আর অপরদিকে চিকিৎসার গাফিলতিতে প্রসূতির মৃত্যুকে ঘিরে এদিন উত্তপ্ত হতে শুরু করে এই মাতৃমা চত্বর। উত্তেজনা পৌঁছায় চরম পর্যায়ে। মারমুখী হয়ে ওঠেন সংশ্লিষ্ট রোগিনীর পরিবারের সদস্য সদস্যাদের পাশাপাশি অন্যান্যরা। এই মাদার এন্ড চাইল্ড হাব এর চেয়ার থেকে আলমারি সবটাই ভেঙে চুরমার করে দেন তারা। এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সংশ্লিষ্ট এলাকায়। এই মাতৃমা- তে কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীরা কার্যত পালিয়ে বাঁচেন এদিন। এরপর পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে পৌঁছোন রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পার্থ প্রতিম রায়, কোচবিহার জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল জলিল আহমেদ প্রমূখ। তারা জানান, বিষয়টি নিয়ে মাতৃমা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *