অনুরোধের ২৪ ঘণ্টায় ট্রেন চালু মহারাষ্ট্রে

 নয়াদিল্লি: লোকাল ট্রেন কবে চলবে? হাওড়া-শিয়ালদহ স্টেশনের সেই পরিচিত ছবিটাই বা দেখা যাবে কবে? এই উত্তর খোঁজার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের উপর চাপিয়ে, দায় এড়ানোর রাজনীতিতেই ফিরে গেল কেন্দ্রীয় সরকার। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ নয়, বরং পশ্চিমবঙ্গ সরকার চাইলেই লোকাল ট্রেন এবং মেট্রো চালু করা হবে বলে জানিয়ে দিলেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ভি কে যাদব। সোমবার তিনি সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য চাইলেই চালু করা হবে শহর ও শহরতলির ট্রেন পরিষেবা। কিন্তু করোনা সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে রাজ্য সরকার এই পথে হাঁটতে চাইবে? এই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।
সোমবার থেকেই শর্তসাপেক্ষে মধ্য এবং পশ্চিম রেলে সাবার্বান পরিষেবা চালু করা হয়েছে। মুম্বই লোকাল ট্রেনে আপাতত শুধু সরকারি ও জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষরাই চড়তে পারবেন। এরপরেই জল্পনা শুরু হয়, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও কী এই পথেই হাঁটবে রেল? কিন্তু এদিন রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, আনলক পর্বে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্তের দায় কেন্দ্র নিতে চায় না। কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারণ, লোকাল ট্রেন ও মেট্রো রেল—এই দুই পরিষেবার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই ইস্যুতে রাজ্যের কোর্টেই বল ঠেলে দিয়ে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেই চাপে রাখতে চাইছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এর আগেও রেলমন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, কলকাতা মেট্রো এবং শহর-শহরতলির লোকাল ট্রেন চালুর ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। রেল সূত্রে খবর, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কীভাবে লোকাল ট্রেন চালানো সম্ভব, তার একটি খসড়া গাইডলাইন তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আরপিএফকে। প্রাথমিকভাবে সাধারণ মানুষকে ট্রেনে উঠতে না দেওয়া হলে অশান্তি বাধবে। বিভিন্ন স্টেশনে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে কী বন্দোবস্ত নেওয়া যায়, তাও দেখতে বলা হয়েছে আরপিএফকে। এদিন সেব্যাপারে প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছে পূর্ব রেলের হাওড়া বিভাগ।
এদিন রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান ভি কে যাদব বলেন, ‘মহারাষ্ট্র সরকার রবিবার রাতেই রেলকে লোকাল ট্রেন চালানোর ব্যাপারে অনুরোধ করেছিল। অন্য রাজ্য সরকারও চাইলে পরিস্থিতি বিচার করে লোকাল ট্রেন এবং মেট্রো পরিষেবা চালুর দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু অনুরোধ আসতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের কাছ থেকেই।’ লোকাল ট্রেন কলকাতার লাইফলাইন। সামগ্রিক অর্থনীতি তখনই চালু হবে, যখন লোকাল ট্রেন পুরোদমে চলবে। কিন্তু করোনায় সর্বাধিক সংক্রমণের শঙ্কাও লোকাল ও মেট্রো রেলকে ঘিরেই। সোজা কথায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ একপ্রকার উভয়সঙ্কট। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার লোকাল ট্রেন চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে না বলেই ধারণা তথ্যাভিজ্ঞ মহলের।
কলকাতা মেট্রো এবং লোকাল ট্রেন চালুর ক্ষেত্রে সবথেকে বড় সমস্যা ভিড় নিয়ন্ত্রণ। যা সামলানোর কোনও দিশা রেলের কাছে এই মুহূর্তে নেই। আর সেই কারণে অন্যত্রও মুম্বই লোকালের মতো করে ট্রেন চালানোর চিন্তাভাবনা করছেন রেল আধিকারিকেরা। এদিকে, মুম্বই লোকালে মান্থলি টিকিট নিয়েও সমাধানসূত্র বেরিয়েছে। রেল জানিয়েছে, লকডাউনের কারণে সিজন টিকিটের যে ক’টি দিন নষ্ট হয়েছে, সেই সংখ্যক দিন পর্যন্তই মেয়াদ উত্তীর্ণ মান্থলির ভ্যালিডিটি বর্ধিত হবে। বাংলার ক্ষেত্রেও একই বন্দোবস্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *