নিউ আলিপুরে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীর মৃত্যুকে ঘিরে তোলপাড়। প্রাথমিক তদন্তে নেমেই দিশাহারা পুলিস। উঠে আসছে একের পর এক প্রশ্ন। সেগুলির যোগসূত্র টেনে আপাত ‘নিরীহ’ এই মৃত্যুর পিছনে বড়সড় রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। আটক করা হয়েছে ছাত্রীর ‘ডিভোর্সি’ মা ও তাঁর প্রেমিককে।
শুক্রবার বিকেলের ঘটনা। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় ওই ছাত্রীকে। তার বাড়ি নিউ আলিপুরের ‘ই’ ব্লকে। বছর দশেক বয়স। স্থানীয় একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ত সে। সঙ্গে ছিলেন মা সান্ত্বনা ভট্টাচার্য ও তাঁর ‘বয়ফ্রেন্ড’ অভিজিৎ নাগ। ছাত্রীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তারপরই হাসপাতাল থেকে বেপাত্তা হয়ে যান সান্ত্বনা-অভিজিৎ। প্রথম প্রশ্ন এখানেই। কেন নিজের মেয়ের দেহ ফেলে চম্পট দিলেন সান্ত্বনা? কর্তব্যরত চিকিৎসকও ওই ছাত্রীকে পরীক্ষা করতে গিয়ে কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেছিলেন। ভয়-ভীতিতে মেয়ের অসুস্থ হয়ে পড়ার যে বয়ান দিয়েছিলেন সান্ত্বনা, তার সঙ্গে মিলছে না মৃত্যুর কারণ। ফলে ময়নাতদন্তের সুপারিশ করেন তিনি। বিপত্তি বাধে এখানেও। খোঁজ শুরু হয় সান্ত্বনাদের। জরুরি বিভাগের খাতা ঘেঁটে দেখা যায়, নাম, ফোন নম্বর ঠিক দিলেও ঠিকানা ভুল দিয়েছেন সান্ত্বনা। ই ব্লকের পরিবর্তে তিনি লিখেছিলেন টি ব্লক। জেরায় পুলিসকে তিনি জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেল তিনটে নাগাদ অসুস্থ হয়ে পড়ে তাঁর মেয়ে। তীব্র পেটের যন্ত্রণা, ধুম জ্বর। অঘোরে ঘুমাচ্ছিল সে। জোর করে বিছানা থেকে তুলে তাকে বেহালার একটি হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। সঙ্গে অভিজিৎ। সেখানে মেয়েকে ভর্তি নেয়নি। তাঁরা আসেন শিশুমঙ্গলে। সেখান থেকেও তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তাঁরা বাড়িতে চলে আসেন। মেয়ের বাড়াবাড়ি হতে তাকে নিয়ে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে আসেন। এবং বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ তাঁর মেয়েকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
শনিবার ময়নাতদন্ত হয় নাবালিকার। রিপোর্ট তৈরিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি তদন্তকারী চিকিৎসক। তবে পুলিস সূত্রে খবর, ছাত্রীর ঘাড়ের পিছনে রাবার জাতীয় কিছু দিয়ে টান মারার চিহ্ন রয়েছে। আজ, সোমবার সান্ত্বনার বাড়িতে যাবেন তদন্তকারী চিকিৎসক। বাড়ির পারিপার্শ্বিক পরিবেশ খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করবেন বলে জানা গিয়েছে। ফলে আপাতত ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত চলাচ্ছে পুলিস। সেক্ষেত্রে সান্ত্বনা-অভিজিতের সম্পর্ক খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।