কলকাতা: ‘চেম্বার খুলেছেন’? প্রশ্ন করতেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বনামধন্য দন্ত চিকিৎসক সাফ জানালেন, না। একই প্রশ্নে আরেক দাঁতের ডাক্তার বললেন, বয়স ৬৫ পার। সুগার, প্রেসার সবই আছে। করোনা হলে ভেন্টিলেটর পাব কি না, জানি না। এখন চেম্বার খোলার প্রশ্নই আসে না।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, দু’জনের একজন লকডাউন পর্বে জেরবার হয়েছেন চোখের সমস্যায়। অন্যজন দাঁতের। ব্যাপক ভুগে শেষে এক ডাক্তারকে বলে চেম্বার খুলিয়ে দেখিয়েছেন প্রথমজন। নিজের দাঁতের ক্ষেত্রে তা করতে পারেননি দ্বিতীয়জন।
ডাক্তাররাই যেখানে চেম্বার বন্ধের জেরে জেরবার, সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থা বলার নয়। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে হার্টের রোগে ভুগছেন ১০-১৫ জন, সুগারে ১২-১৩ জন, উচ্চ রক্তচাপে ২৫-৩০ জন। কিডনির রোগ আছে প্রতি ১০০ জনে একজনের (শহরাঞ্চল), মাড়ি ও দাঁতের সমস্যা তো লেগেই আছে। দীর্ঘদিন চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকায় মনের রোগও এই পর্বে বাড়তি মাত্রা পেয়েছে। এছাড়াও আছেন রাজ্যের প্রায় ৮০ হাজার ক্যান্সার রোগী। কোভিড নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণে বছরভর ‘নন করোনা’ অসুখে ভোগা এইসব লক্ষ লক্ষ মানুষের এখন জেরবার দশা। কারণ, রাজ্যজুড়ে এখনও খোলেনি বহু প্রাইভেট ডাক্তারের চেম্বার। বিশেষত, ইএনটি, চোখ, দাঁত, মনের অসুখ সহ বহু রোগের বিশেষজ্ঞরা চেম্বার বন্ধ রেখেছেন। প্রথম তিন অসুখের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেই দিয়েছে, করোনা ছড়ানোর ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। চেম্বার বন্ধ রেখেছেন বিভিন্ন পাড়ার জেনারেল প্র্যাকটিশনার ও বয়স্ক ডাক্তাররাও।
একদিকে করোনা ভীতি, অন্যদিকে পুরনো রোগ নিয়ে রীতিমতো সিঁটিয়ে রয়েছেন হাজারো মানুষ। সরকারি হাসপাতালে অন্য সময় ঠাঁই নাই অবস্থা। সেখানে এখন অসংখ্য বেড ফাঁকা। কিন্তু দূর-দূরান্ত থেকে রোগী আসবেন কীভাবে? যাঁরা আউটডোরে-ইমার্জেন্সিতে আসছেন, মোটা টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে।
উল্টোডাঙা লাগোয়া এক বেসরকারি হাসপাতালের অঙ্কোলজিস্ট চেম্বার খুললেন শনিবার। বললেন, রোগীরা আমাকে ফিজ দেবে, নাকি গাড়িভাড়া!