যুদ্ধে কার পক্ষ নিচ্ছে ভারত

বেজে গিয়েছে যুদ্ধের দামামা। ইউক্রেনের ওপর হামলা শুরু করে দিয়েছে রাশিয়া। ইতিমধ্যেই একাধিক মৃত্যু হয়েছে ইউক্রেনে। জায়গায় জায়গায় মিসাইল, বোমা পড়ছে এবং বহু মানুষ নিখোঁজ। রাশিয়ার আক্রমণের পালটা যে ইউক্রেনও দিচ্ছে তাও দাবি করা হয়েছে সেখানকার প্রশাসনের তরফে। সব মিলিয়ে একেবারে যুদ্ধ পরিস্থিতি এই দুই দেশের মধ্যে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ইউক্রেন সীমান্তে আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের সেনাকে অস্ত্র ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই অবস্থায় একাধিক দেশ নিজেদের মতো করে অবস্থান নিয়েছে। কেউ ইউক্রেনের সমর্থনে, কেউ রাশিয়া। তবে ভারতের অবস্থান কী?

আমাদের দেশ কোনও সময়ই যুদ্ধ সমর্থন করেনি। আলোচনা, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমেই জটিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়াতে বেশি উদ্যত ভারত। রাশিয়া এবং ইউক্রেন সংঘর্ষের মাঝেও সেই একই রকম আলোচনার বার্তা দিয়ে ভারত সরকার নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে গিয়েও কথাবার্তার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়েছিল ভারত। আর সব থেকে বড় ব্যাপার, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব একটা খারাপ নয়। বিগত সময়ে একাধিক চুক্তিও করেছে দুই রাষ্ট্র। তাই এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে ভারত যে ঠিক কাজ করেছে তা মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞই। তবে ভারতের প্রতিবেশী একাধিক দেশ সরাসরি সমর্থন করছে রাশিয়াকে। তাতে ভারতের চিন্তা পড়ে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।

রাশিয়াকে সমর্থনকারী দেশগুলির মধ্যে সবথেকে বড় নাম চিন। পাশাপাশি রয়েছে পাকিস্তান। তারা সরাসরি ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে। ত দু’দশক ধরে রাশিয়া এবং চিনের সম্পর্ক ভাল। এই দুই দেশই অর্থনৈতিক এবং সামরিক দিক দিয়ে একে অপরের সঙ্গে নিবিড় ভাবে যুক্ত। তাই বেজিং সরকার যে রাশিয়ার সঙ্গেই থাকবে তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এদিকে পাকিস্তানও চিন এবং রাশিয়া থেকে সাহায্যের আশ্বাস পায়। ইতিমধ্যে এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে রাশিয়া সফরে গিয়ে, সেখানে নামার পরেই পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘কী দারণ সময় রাশিয়া এলাম। খুব উত্তেজনাময় পরিস্থিতি!’ যা নিয়ে এখন বিতর্ক।

চিন, পাকিস্তানের মত সরাসরি রাশিয়াকে সমর্থন করেছে এমন অনেক দেশ হয়তো নেই, কিন্তু ইউরোপের নেটো দেশগুলি সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেতে চাইছে না। ভারতের মতোই নিজেদের অবস্থান এখনও পরিষ্কার করেনি ইউরোপের এই দেশগুলি। এর জন্য নর্ড গ্যাসপাইপলাইন চুক্তি প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। আসলে ইউরোপের বিদ্যুৎক্ষেত্রে বড় ঘাটতির মুহূর্তে এই গ্যাস পাইপলাইন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যা রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত বিস্তৃত। তার কাজও প্রায় শেষের পথে। তাই রাশিয়াকে এখনই কেউ ঘাঁটাতে চাইছে না। জার্মানি কিছুটা প্রতিবাদ দেখালেও তা না দেখানোর মতোই।

অন্যদিকে, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের (নেটো) ৩০টি দেশ আগে থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেছে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তো সরাসরি রাশিয়ান প্রেসিডেন্টকে আক্রমণ করে বলেছেন যে, মানুষের মৃত্যু হলে তার দায় থাকবে তাঁর ওপরেই। পাশাপাশি যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে তাঁকে বিরত থাকার বার্তাও দেওয়া হয়েছিল। এমনকি আমেরিকা যে চুপচাপ বসে থাকবে না তার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আখেরে লাভ হয়নি। আমেরিকার মতো ব্রিটেনও সরব হয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু তাতেও লাভ হবে বলে মনে হয় না। তবে সব থেকে সঙ্কটে পড়েছে লগেরিয়া, এস্টোনিয়া, লাটভিয়া, রোমানিয়া, লিথুয়ানিয়া, স্লোভাকিয়ার মতো দেশে। এইসব দেশ রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুই দেশেরই সীমান্তে। আবার এই দেশগুলির উপর সামরিক জোটসঙ্গী হিসেবে একদা রাশিয়ার প্রভাব ছিল। তাই তারা আদতে কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *