কে এই দ্রৌপদী মুর্মুর?রাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থীর জন্য যাকে এত পছন্দ বিজেপির

সম্প্রতি তার নাম এসেছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মনোনয়ন পত্রতে। এই মুহূর্তে জল্পনা তুঙ্গে তাকে নিয়ে। জীবনের শুরুটা হয়েছিল শিক্ষিকা হিসাবে। সেখান থেকে রাজনীতি। তবে তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে। এর পর বিধায়ক, মন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে রাজ্যপাল৷ সেই আদিবাসী নেত্রী দ্রৌপদী মুর্মুই এবার এনডিএ শিবিরের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী৷ মঙ্গলবার বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা তাঁদের প্রার্থী হিসাবে দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করেন৷ 

দ্রৌপদীর রাজনৈতিক জীবন এক কথায় সফল৷ তৃণমূল স্তর থেকে ধীরে ধীরে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছেন তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে বারবার নেমে এসেছে আঘাত। ‘মহাভারতে’র দ্রৌপদীর মতোই পুত্রশোকে বিহ্বল হয়েছেন তিনি৷ তিন বছরের ব্যবধানে হারিয়েছেন দুই পুত্রকে৷ হারিয়েছেন স্বামীকে৷ 

শ্যামচরণ মুর্মুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন দ্রৌপদী। তাঁদের সংসার আলো করে আসে দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তান৷ কিন্তু, আচমকাই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন শ্যামচরণ। দ্রৌপদীর জীবনে শুরু হয় ট্র্যাজেডি৷ এর পর আরও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে৷

২০০৯ সালের ঘটনা। দ্রৌপদী তখন নিজ কেন্দ্র রায়রংপুরে থাকেন৷ তাঁর পুত্র লক্ষ্মণ থাকতেন পত্রপড় এলাকায় কাকার বাড়িতে৷ হঠাৎ এক দিন সকালে বিছানা থেকে জ্ঞানহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় লক্ষ্মণকে। তড়িঘড়ি তাঁকে নিকটবর্তী বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে  ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, মৃত্যুর আগের দিন রাতে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে একটি রেস্তরাঁয় নৈশভোজে গিয়েছিলেন লক্ষ্মণ। সেখান থেকে বন্ধুরাই অটোরিকশা করে তাঁকে কাকার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যান। বাড়ি ফেরার পর থেকেই অস্বস্তি বোধ করছিলেন৷ বাড়ির সদস্যরা ভেবেছিলেন তিনি বুঝি ক্লান্ত৷ তাই আর সেই রাতে তাঁর সঙ্গে কেউ কথা বলেননি৷ পরের দিন সকালে দেখেন জ্ঞানহীন অবস্থায় বিছানায় পড়ে রয়েছেন লক্ষ্মণ৷ পুলিশের অনুমান ছিল, বাড়ি ফেরার সময় লক্ষ্মণ মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। যদিও ময়নাতদন্তে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি।

লক্ষ্মণের মৃত্যু রহস্যের কিরানা পেতে বহু বার পুলিশি তদন্ত হয়েছে৷ কারও মতে, সেই রাতে দ্রৌপদী-পুত্র বাইক চালিয়ে ফিরছিলেন। রাস্তাতে বাইক থেকে পড়ে গিয়ে চোট পান৷ আবার অনেকে বলেন, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণেই মৃত্যু হয়েছে লক্ষ্মণের। তবে তাঁর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ যে কী, তা আজও এক রহস্য।

এক পুত্রের মৃত্যু শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরও একবার ধাক্কা আসে দ্রৌপদীর জীবনে। লক্ষ্মণের মারা যাওয়ার ঠিক তিন বছরে মাথায় দ্বিতীয় পুত্রকে হারান তিনি। পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দ্বিতীয় পুত্রের৷ দ্রৌপদীর এক মাত্র কন্যা ইতিশ্রী মুর্মু পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী। গণেশ হেমব্রম নামে এক রাগবি খেলোয়াড়ের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েছেন তিনি। তাঁদের এক কন্যাও রয়েছে।  দ্রৌপদীর ব্যক্তিগত জীবনে একের পর এক ঝড় এসেছে৷ সেই সব ঝড় সামলে আপাতত তাঁর লক্ষ্য রাইসিনা হিল। বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহার সঙ্গে হবে তাঁর টক্কর৷ যশবন্তকে হারিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলে এক নতুন ইতিহাসের রচনা হবে৷ দ্রৌপদীই হবেন দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *