বাঘের ডেরা হিসাবেই পরিচিত এই জায়গা। অসংখ্য বন্যপ্রাণের নিবিড় আশ্রয় যে গহীন অরণ্য, সেখানেই ইতিহাসের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে প্রাচীন সুবিশাল দুর্গ। ভারতের নানা প্রান্তেই অরণ্যের গভীরে রয়েছে এমন ইতিহাসের খোঁজ। একসময় যে অরণ্য ছিল রাজরাজড়াদের শিকারক্ষেত্র এখন তা-ই পরিণত হয়েছে বন্যপ্রাণের নির্ভয় বিচরণক্ষেত্রে। যার উদ্দেশ্যই হল, বন্যপ্রাণের বাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তোলা। এমনই তিন ঠিকানা রয়েছে ভারতে, যেখানে রয়েছে পুরোনো দুর্গও।

বান্ধবগড় দুর্গ: মধ্যপ্রদেশের এ অরণ্যের খ্যাতি বাঘের জন্য। উমারিয়া জেলায় বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যান লেপার্ড, চিতল, স্পটেড ডিয়ার, ঢোল, গউর, সম্বর, নীলগাই, হায়না, ফোর হর্ন অ্যান্টিলোপ-সহ অজস্র বন্যপ্রাণী এবং কয়েকশো প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। এই জঙ্গলেই অবস্থিত প্রাচীন দুর্গ। ঠিক কবে তা তৈরি হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। তবে কথিত আছে, খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে তা নির্মিত। বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যানের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান এই দুর্গের। এই দুর্গ ঘিরে প্রচলিত রয়েছে নানা লোককথা। এই দুর্গে পৌঁছতে বনদপ্তরের বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। তবে বিশেষ উৎসবের দিনে সেখানে জনসাধারণের প্রবেশের ছাড়পত্র মেলে।

রণথম্ভোর দুর্গ: রাজস্থানের সওয়াই মাধোপুর জেলার রণথম্ভোর জাতীয় উদ্যান উত্তর ভারতের অন্যতম বৃহৎ অভয়ারণ্য। সেখানেই রয়েছে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি পাওয়া প্রাচীন রাজাদের দুর্গ। খ্রিস্টীয় দশম শতকে চৌহান রাজাদের আমলে সুবিশাল দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল বলে জানা যায়। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে দিল্লির সুলতানরা দখল নেন এই দুর্গের। রাজপুত এবং মোগল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত দুর্গটি আজও পর্যটকদের মুগ্ধ করে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই দুর্গ খোলা থাকে। অক্টোবর থেকে মার্চ দুর্গে ঘোরার আদর্শ সময়।

কুম্ভলগড়ের দুর্গ: রাজস্থানে উদয়পুরের কাছে রাজসামাণ্ড জেলায় অবস্থিত কুম্ভলগড় অভয়ারণ্য। জঙ্গল সন্নিহিত অঞ্চলেই রয়েছে কুম্ভলগড় দুর্গ। গুরুত্বের বিচারে মেবারের চিতোরের দুর্গের পরেই স্থান এটির। এই দুর্গের সৌন্দর্য দ্বিগুণ করে তুলেছে আরাবল্লি পর্বতমালা। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে রানা কুম্ভ এই দুর্গ নির্মাণ করান। কুম্ভলগড়ের অন্যতম আকর্ষণ এর সুবিশাল প্রাকার, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬ মিটার। মেবারের রানা প্রতাপের জন্মস্থলও এটি। এর স্থাপত্যশৈলী আজও পর্যটকদের বিস্মিত করে।