আল কায়দা প্রধানের মাথার দামই ছিল আড়াই কোটি ডলার

বাইশ বছর আগের এক মর্মান্তিক ঘটনা, এখনো যেন তাড়া করে বেড়ায় অনেক মানুষকে। সম্প্রতি এই ঘটনায় সন্ত্রাসদমনে বড়সড় সাফল্য পেল আমেরিকা। কাবুলে মার্কিন ড্রোন হানায় নিহত ৯/১১ হামলার অন্যতম চক্রী তথা আল কায়দা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরি।

এই খবর নিশ্চিত করেছেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন৷ কাবুলে আল কায়দা প্রধানের বাড়িতে হামলার কিছু ছবিও প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। যা দেখে অনেকেই বিস্মিত৷ সেখানে দেখা গিয়েছে, যে ঘরে আল-কায়দা শীর্ষ নেতা ছিলেন, সেই ঘরের জানলা উড়ে গিয়েছে।

কিন্তু বাকি ঘরগুলিতে হামলার কোনও চিহ্ন নেই৷ আশে পাশের এলাকাতে হামলার লেশমাত্র নেই! এমনকী হামলার শব্দ পর্যন্ত হয়নি। বলতে গেলে আল কায়দা প্রধান ছাড়া কারও গায়ে হামলার আঁচ লাগেনি! কিন্তু, আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে হত্যার জন্য কী এমন গোপন অস্ত্র ব্যবহার করল আমেরিকা?

ঠিক কোন অস্ত্র প্রয়োগ করে আল কায়দা প্রধানকে নিকেষ করা হয়েছে, তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি৷ তবে বিস্ফোরণের প্রকৃতি দেখে মনে করা হচ্ছে, আল কায়দা প্রধানকে হত্যা করতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ম্যাকাব্রে হেলফায়ার আরএনএক্স’। এই ‘ওয়ারহেড-লেস মিসাইল’-এর বৈশিষ্ট্য হল বিস্ফোরণ ছাড়াই এটা লক্ষ্যবস্তুকে টুকরো টুকরো করে দেয়। শব্দটুকুও হয় না।

এ নিয়ে পেন্টাগন বা সিআইএ- কেউই এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনও বিবৃতি দেয়নি। তবে এর আগেও একই অস্ত্রে বেশ কয়েক জন সন্ত্রাসবাদী নেতাকে হত্যা করেছে আমেরিকা। ২০১৭ সালে এই বিশেষ অস্ত্রের প্রয়োগ করে আমেরিকা৷ এই অস্ত্রেই শেষ করা হয়েছিল আরও এক আল কায়দা নেতাকে৷

সিরিয়ায় গাড়ি নিয়ে ঘোরার সময় এই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের অন্যতম শীর্ষনেতা আবু আল-খায়ের আল-মাসরিকে এই অস্ত্রে খতম করা হয়৷ কোনও শব্দ নেই৷ আচমকা গাড়ির ছাদ ফেটে মৃত্যু হয় তাঁর। নেপথ্যে ছিল ‘ম্যাকাব্রে হেলফায়ার আরএনএক্স’৷

আবু আল-খায়ের আল-মাসরির হত্যারও বেশ কিছু ছবি প্রকাশ্যে এসেছিল৷ তাতে দেখা যায়, গাড়ির ছাদে একটা বড় ফুটো। গাড়ির ভিতরের অংশ তছনছ। অথচ অদ্ভুত ভাবে গাড়ির সামনের এবং পিছনের অংশ একেবারে অক্ষত। ধ্বংসের চিহ্নটুকু নেই।

সূত্রে খবর, এদিন কাবুলে একটি বাড়ির ব্যালকনিতে খতম করা হয়েছে আল-জওয়াহিরিকে। জওয়াহিরির ছদ্মনাম ছিল ‘ডাক্তার’। মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রথম ইসলামি মৌলবাদ গ্রহণ করেন তিনি। পরবর্তীতে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনে পড়াশোনা করেন৷ পড়াশোনায় বরাবরই ভাল ছিলেন।

১৯৭৪ সালে স্নাতক হন এবং মিশরের সেনাবাহিনীতে শল্য চিকিৎসক হিসাবে কাজে যোগ দেন৷ তিন বছর কাজ করার পর মাদি এলাকায় নিজের ক্লিনিক খোলেন। চার বার বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন আল কায়দা প্রধান। তাঁর ছয় কন্যা ও এক পুত্র সন্তান ছিল। ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে আফগানিস্তানে আমেরিকার বিমানহানায় পুত্র মহম্মদ ও কন্যা আয়েশার মৃত্যু হয়। আল-জওয়াহিরির মাথার দাম ছিল আড়াই কোটি ডলার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *