গত দুদিন তোলপাড় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যে৷ সরগরম রাজ্য রাজনীতি৷ দীর্ঘ প্রায় ছাব্বিশ ঘন্টা সময় জিজ্ঞেসাবাদের পর গত পরশুই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে আসা হয়েছে ব্যাঙ্কশাল আদালতে৷ তাঁকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আদালতে আর্জি জানায় ইডি৷
কিন্তু আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার বলে ইডির বিশেষ আদালতের রেগুলার বেঞ্চ বসেনি৷ তাই সিএমএম কোর্টে তোলা হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে৷ তাই দু’দিনের বেশি রিমান্ড যে পাওয়া সম্ভব নয়, তা প্রায় নিশ্চিত ছিল৷
সেই মতোই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ২ দিনের হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়৷ আজ সোমবার ইডি’র বিশেষ আদালত ফের তোলা হবে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে৷ জানা গিয়েছে, এদিন ইডি-র তরফে আদালতে পেশ করা ছয় পাতার ফরওয়ার্ডিং লেটারে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে৷
প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং আইনের ৩ নম্বর ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে৷ অর্থাৎ এসএসসি দুর্নীতিতে টাকার লেনদেন হয়েছিল৷ কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে৷ ইতিমধ্যেই উদ্ধার হয়েছে ২১ কোটি টাকা৷ কিন্তু বাকি টাকা কোথায় গেল? সেটা খুঁজে বার করাই এখন ইডির লক্ষ্য৷
ইডি’র আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, এই মামলায় একাধিক সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে৷ তাছাড়া সূত্র মারফত তাঁরা জানতে পেরেছেন এই টাকার পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি৷ এছাড়াও জানা গিয়েছে, প্রচুর বেনামি সম্পত্তি রয়েছে৷ বেনামে প্রচুর জমি কিনে রাখা হয়েছে এবং এই সমস্ত টাকাই এসেছে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি থেকে৷
এদিকে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, গতকাল সন্ধ্যে ৬ টা ৪০ মিনিটের বিমানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামে দুটো টিকিট বুক করা রয়েছে৷ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লি কিংবা ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে৷
অন্যদিকে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী এদিন বলেন, মামলার সিজার লিস্ট জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে কিছু জেরক্স কাগজ উদ্ধার হয়েছে৷ কিন্তু কোনও টাকা উদ্ধার হয়নি৷ পার্থর আইনজীবী দেবাশীষ সাহার সওয়াল, হাই কোর্টের নির্দেশে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত শুরু করেছিল সিবিআই। হাই কোর্টের নির্দেশে পার্থ চট্টোপাধ্যায় দু’বার হাজিরাও দিয়েছেন। আদালত, সিবিআইকে গ্রেফতার করার ক্ষমতা দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, তাছাড়া একজন দীর্ঘদিনের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ তাঁর বাড়ি থেকে ৪-৫ লক্ষ টাকাও উদ্ধার করতে পারেনি। কেন আমার মক্কেলকে পি এম এল এ আইনে জড়ানো হল? ইডি-র এত ইন্টারেস্ট কিসের? পার্থর আইনজীবীর সওয়াল, আমার মক্কেল একজন বয়স্ক৷ তাঁকে সারারাত জিজ্ঞাসাবাদ করে ভোর রাতে গ্রেফতার করা হল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীর সিজার লিস্টে কিছু নেই, টাকাও উদ্ধার করা হয়নি। উনি পালিয়ে গিয়েছেন তেমনটাও নয়৷ ২৪শে মে মামলা রুজু হওয়ার পর একবারও তাঁকে ডাকেনি ইডি৷
এদিকে ইডি’র বক্তব্য, সিবিআই তদন্ত করছে। আমরাও আর্থিক দুর্নীতি মামলায় তদন্ত করছি৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিক ব্যক্তির যোগাযোগ আছে। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ২১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অর্পিতার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তদন্ত দেখা গিয়েছে এই মামলার কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। সাংবিধানিক ক্ষমতা আমাদের শীর্ষ আদালত দিয়েছেন। তাই আমরা তাঁকে গ্রেফতার করতে পারি৷ এমনটাই আদালতে জানায় ইডি’র আইনজীবীরা।