রাজ্যে নতুন করে উগ্রপন্থা ছড়াতে মদত দিলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি জানি কেউ কেউ চেষ্টা করছে যে ত্রিপুরাতে কিভাবে আবার উগ্রপন্থা তৈরি করা যায়। তাই আমি তাদের হুশিয়ারি দিয়ে বলছি যে এবার কিন্তু ছাড় দেওয়া হবে না কেউ যদি উগ্রপন্থী সৃষ্টির চেষ্টা করে। আমাদের কাছে এসমস্ত সব খবর আছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অনেক কষ্টে রাজ্যে একটা শান্তির পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। আমরা চাই রাজ্যের সমস্ত স্তরে সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন করার। কমিউনিস্টদের সময়ে ত্রিপুরায় অরাজক পরিস্থিতি কায়েম ছিল। আমরা চাই একটা সুস্থ পরিবেশ ত্রিপুরায় তৈরি করতে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে ত্রিপুরা এখন একটা বেস্ট পারফর্মার স্টেট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মহিলাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নেও বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে রাজ্য সরকার। বুধবার পশ্চিম জেলার জিরানিয়া মোটরস্ট্যান্ড কমপ্লেক্সে পাঁচটি প্রকল্পের শিলান্যাস ও একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। শিলান্যাস হওয়া নতুন প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে – জিরানিয়া মোটরস্ট্যান্ড, জোলাইবাড়ি মোটরস্ট্যান্ড, মেলাঘর মোটরস্ট্যান্ড, জেলা পরিবহন অফিস, তেলিয়ামুড়া, খোয়াই জেলা এবং জেলা পরিবহন অফিস, শান্তিরবাজার, দক্ষিণ ত্রিপুরা। এছাড়া ভার্চুয়ালি উদ্বোধন হয় খোয়াই জেলার পুরান বাজারস্থিত ইন্টিগ্রেটেড পার্কিং কমপ্লেক্স। পরিবহন দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা সর্বমোট ৪০.৫৮ কোটি টাকার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, আজকের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন পরিবহণ দপ্তরের ইতিহাসে তো বটেই, রাজ্যের ইতিহাসেও এক নতুন পালক যুক্ত করেছে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এজন্য অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি শুরু করেছেন তিনি। এর মাধ্যমে যেভাবে উত্তর পূর্বের উন্নয়ন হচ্ছে সেটা আগে কোনদিন দেখা যায় নি। সেই লক্ষ্যে বিকাশের দিশায় এগিয়ে চলছে ত্রিপুরাও। বর্তমানে পরিবহন দপ্তর যে ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে তাতে যানবাহন মালিক, চালক ও যাত্রীদের সুবিধা হবে। আগে কিন্তু এমন কোন চিন্তাভাবনা করে নি তারা। কমিউনিস্ট শাসনে শুধু কথায় কথায় জিন্দাবাদ চলেছে। কেন্দ্র দেয় না ইত্যাদি কথা শুনতে হতো তখন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কাজের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার বলছেন কাজের কোন বিকল্প নেই। তিনি আমাদের হিরা মডেল দিয়েছেন। রাজ্যে ৬টি জাতীয় সড়ক দেওয়া হয়েছে। এরফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন আগের চাইতে অনেক গুণ উন্নত হয়েছে। বিগত সংসদ নির্বাচনে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার সফর করতে হয়েছে আমাকে। এরমধ্যে ৬ হাজার কিলোমিটার সড়ক পথে এবং বাকি রাস্তা রেলে সফর করি। আগে ধর্মনগর যেতে হলে ৫/৬ ঘণ্টা সময় লাগতো। আর এখন দুই আড়াই ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়। সেটা সম্ভব হয়েছে আমাদের যশস্বী প্রধানমন্ত্রীর জন্য। আমাদের রাজ্যে এখন দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা রয়েছে। রেল পরিষেবারও উন্নতি হয়েছে। রেলের আধুনিকীকরণের জন্য আর্থিক সহায়তা করছেন প্রধানমন্ত্রী। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় প্রায় ১২টি মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে সারা উত্তর পূর্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ত্রিপুরার জন্যও মৌ হয়েছে। কিছুদিন আগে এটিটিএফ ও এনএলএফটি বৈরী গোষ্ঠীর সঙ্গে দিল্লিতে মৌ স্বাক্ষর হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পন করে মূলস্রোতে ফিরে এসেছেন। এখন ত্রিপুরা উগ্রপন্থা মুক্ত রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আগে কমিউনিস্টদের সময়ে একটা অরাজক পরিস্থিতি ছিল গোটা রাজ্যে। সমস্ত কলেজ, ক্লাব, পাড়ায় পাড়ায় যে উশৃঙ্খল পরিবেশ ছিল সেটা ভুলে গেলে চলবে না। আমরা দেখতাম নির্বাচনের আগে সন্ত্রাস, নির্বাচনের সময়ে সন্ত্রাস। এই মজলিশপুর বিধানসভা কেন্দ্রেও একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল। নির্বাচনের পরে গোটা রাজ্যে ফায়ার সার্ভিসের ইঞ্জিনের আওয়াজ আমরা শুনতে পেতাম। আর এখন রাজ্যে একটা সুস্থির পরিবেশ ও শান্তির পরিবেশ এসেছে। আমি মন্ত্রী থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি এবং পার্টির সকলকে বলি যে এতদিন ধরে আমরা যে সংস্কৃতি দেখে এসেছি সেটা যাতে ফিরে না আসে। আমরা মানুষের অধিকারের জন্য কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাদের যে শিখিয়েছেন সেভাবেই আমরা কাজ করছি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে স্বাস্থ্য, কৃষি, পর্যটন, ক্রীড়া সহ সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে ত্রিপুরা। আমরা চাই ত্রিপুরায় একটা সুস্থ পরিবেশ তৈরি করতে। ২০১৪তে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই সুযোগ তৈরি হয়েছে। এরআগে এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছিল যে দেশ টিকবে কি টিকবে না সেটা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছিল। আমাদের সৈনিকদের গলা কেটে ফেলে দিয়ে যেত পাকিস্তানের হার্মাদ বাহিনী। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ঘরে ঢুকে যেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছে এর পর থেকে আর শব্দ নেই।
ডাঃ সাহা বলেন, প্রতিটি রাজ্য উন্নত হলে দেশও উন্নত হবে। ত্রিপুরাতে বিরোধীরা প্রায় বলে এখানে আইন শৃঙ্খলার অবনতির কথা। তাই আমি তথ্য দিয়ে বলি যে দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থায় নিচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। তাহলে কোথায় আইন শৃঙ্খলার সমস্যা? আমরা দেখেছি আমাদের জাতি জনজাতির মধ্যে একটা বিভেদ সৃষ্টি করার চক্রান্ত করা হয়েছে। যেমন গন্ডাতুইসার ঘটনা। আমি নিজে সেখানে গিয়েছি এবং তিনদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। একইভাবে কুর্তি কদমতলাতেও এমন ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা হয়েছিল। ডাঃ সাহা বলেন, মা বোনেদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন কিভাবে আরো করা যায় সেই ভাবনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবার কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার ধাঁচে ত্রিপুরাতে একমাত্র রাজ্য হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা চালু করা হয়। কিছুদিন আগে জেআরবিটির মাধ্যমে চাকরি প্রদানের ব্যবস্থা হয়েছে। এরআগে গ্রুপ সি পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে এসব চাকরি দেওয়া হয়েছে। অথচ আগে চাকরি দেওয়ার সাথে সাথে আদালতে মামলা হতো। ২০১৮ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজারের অধিক সরকারি চাকরি প্রদান করা হয়েছে। এর পাশাপাশি যুবদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যেও কাজ করছে সরকার। এমএসএমই’র মধ্যে এখন পর্যন্ত ২.১ লাখ যুবরা যুক্ত হয়েছে। সম্প্রতি ডেস্টিনেশন ত্রিপুরা নামে বিজনেস সামিটে রাজ্যে শিল্প স্থাপনের জন্য প্রায় ৩,৭০০ কোটি টাকার মৌ স্বাক্ষর হয়েছে। রাজ্যে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের রাজ্যে একটা ফাইভ স্টার হেরিটেজ হোটেল গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে হয়তো মৌ হয়ে যাবে। সারা দেশে এধরণের হোটেল ৬টা রয়েছে। এজন্য টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে কথা হয়েছে। এর মাধ্যমে মানিক্য রাজ বংশের ইতিহাস সারা পৃথিবী জানতে পারবে। এধরণের হোটেল গড়ে উঠলে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে। আমরা চেষ্টা করছি ত্রিপুরাকে কিভাবে এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা হিসেবে গড়ে তোলা যায়। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, জিরানিয়া নগর পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান রতন কুমার দাস, পরিবহন দপ্তরের সচিব সি কে জমাতিয়া, পরিবহন দপ্তরের কমিশনার সুব্রত চৌধুরী, সমাজসেবী গৌরাঙ্গ ভৌমিক সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ।