পুরসভা এলাকায় এবার গোলাপি অটো, পরিবহণ মন্ত্রী জানালেন বাড়বে কড়া নজরদারি

আগরতলা পুর নিগম এলাকায় চলাচলকারী অটোরিকশাগুলোকে অন্য মহকুমার অটো থেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। পরিবহণ মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী আজ সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, এখন থেকে পুর নিগম এলাকার সমস্ত অটোরিকশার সামনের অংশ হবে গোলাপি রঙের। এর মাধ্যমে শহরের যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরানোর পাশাপাশি জননিরাপত্তা বাড়ানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, প্রতিটি অটোকে তাদের রুট পারমিট স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করতে হবে এবং কেউই নির্ধারিত পারমিটের সীমার বাইরে যেতে পারবেন না। কেবলমাত্র বিশেষ প্রয়োজনে, যেমন চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণ বা বিমান যাত্রার ক্ষেত্রে, বাইরের অটোরা যথাযথ প্রমাণপত্র দেখিয়ে পুর নিগম এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে। নিয়ম ভঙ্গকারী অটোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বারবার একই অপরাধ করলে জরিমানাও ধার্য হবে।

চৌধুরী বলেন, ১৫ কিলোমিটারের নির্ধারিত সীমার বাইরে কোনো অটো চলাচল করলে কড়া নজরদারি চালানো হবে। অন্য মহকুমার পারমিটপ্রাপ্ত অটো যাতে অবৈধভাবে আগরতলা পুর নিগম এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে, তার জন্য ১৩টি নাকা পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ ও পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকদের দিয়ে কড়া নজরদারি চালানো হবে। চন্দ্রপুর, চম্পকনগর (সাধুপাড়া), হাওয়াইবাড়ী, সিধাই-মোহনপুর, শালবাগান, আমতলী ও বিশালগড়ে এই পয়েন্টগুলো স্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়াও, মন্ত্রী জানান, ব্যক্তিগতভাবে রেজিস্ট্রি করা ইকো, মারুতি বা অটো গাড়িগুলো স্কুল সাইনবোর্ড লাগিয়ে ছাত্রছাত্রী ও অফিস কর্মীদের বহন করছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ জারি করে জানানো হবে যে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক লাইসেন্সপ্রাপ্ত গাড়িগুলোকেই এমন কাজে ব্যবহার করা যাবে। নিরাপত্তার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

‘হিট অ্যান্ড রান’ দুর্ঘটনায় নতুন ক্ষতিপূরণ নীতি ও ‘রাহ-বীর’ প্রকল্প: ‘হিট অ্যান্ড রান’ দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ সরাসরি তার ওয়ারিশ বা আইনানুগ প্রতিনিধির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হবে। আহত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ প্রদান করা হবে।

জনসাধারণকে দুর্ঘটনাগ্রস্তদের সাহায্যে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার শুরু করেছে ‘রাহ-বীর’ (গুড সামারিটান) প্রকল্প, যা ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে। এই প্রকল্পে কেউ যদি আহতদের তাৎক্ষণিক সহায়তা করেন, তবে তাকে আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হবে এবং কোনো আইনি জটিলতায় পড়তে হবে না। মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, দুর্ঘটনার প্রথম এক ঘণ্টাকে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এই সময়কালের মধ্যেই আহতদের চিকিৎসার আওতায় আনা গেলে অনেক ক্ষেত্রে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। তাই, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

‘হিট-এন্ড-রান’ দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পেতে প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ নির্দিষ্ট অনলাইন ফর্মের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদন গৃহীত না হলে, বাতিলের কারণ জানিয়ে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট মহকুমা শাসক এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট জেলা শাসকের কাছে পাঠাবেন।

মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বলেন, এই সব নির্দেশনার মাধ্যমে রাজ্য সরকার শহরে যানবাহনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি জননিরাপত্তা ও দায়িত্বশীল নাগরিকত্ব গঠনের লক্ষ্য নিয়েছে।