একাধিক দূর্নীতির অভিযোগের পরিস্থিতিতে, রাজ্যের শাসক দলের ভাবমূর্তি ফেরাতে বিশেষ বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

এই মুহূর্তে বেশ খানিকটা চাপের মধ্যেই আছে রাজ্যের শাসকদল। রাজ্যের বড় দুই দুর্নীতির কাণ্ডে জড়িত পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল ইস্যুতে তৃণমূল যথেষ্ট অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে। দুর্নীতি ইস্যুতে বিরোধীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে রদবদলের পর রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে মন্ত্রীদের পাইলট কার ব্যবহার করতে নিষেধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করার আগে সেগুলি ভাল করে দেখে নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, মন্ত্রীরা কেউ যেন পাইলট কার ব্যবহার না করেন। এমনকী জেলা থেকে কলকাতায় আসলেও কেউ পাইলট কার ব্যবহার করতে পারবেন না।

এছাড়া এবার থেকে প্রতিমন্ত্রীদের জন্য আলাদা করে কাজ ঠিক করে দেবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। কারণ এতদিন প্রতিমন্ত্রীদের বিশেষ কাজ থাকত না। তাই তাঁদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, কেউ যেন বসে না থাকেন। কাজের ক্ষেত্রে সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।

সেই সঙ্গে নতুন মন্ত্রীদের মুখ্যমন্ত্রী এদিন পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রত্যেকে যেন কাগজপত্র ভাল করে পড়ে তবেই যেন তাতে সই করেন। অর্থাৎ প্রত্যেক মন্ত্রীর যাতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় থাকে সেই লক্ষ্যেই মুখ্যমন্ত্রী এদিন এমন নির্দেশ দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

বৈঠকে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে কিছুটা ধমকের সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,”বালু (জ্যোতিপ্রিয়) তোমার নামে এত অভিযোগ শুনছি কেন? পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রেখে চলো। কেন আমাকে অভিযোগ শুনতে হবে?” উল্লেখ্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা নিজের গাড়িতে লালবাতি লাগানো পাইলট কার ব্যবহার করেননি। আসলে মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন এভাবে যদি মন্ত্রীরা গাড়িতে লালবাতি লাগিয়ে ঘুরে বেড়ান তাহলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব বাড়বে।

অর্থাৎ এটা পরিষ্কার পার্থ-অনুব্রতকে নিয়ে তৃণমূল যে প্রবল অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে সেখান থেকে দলের ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে মরিয়া তৃণমূল নেত্রী। তাই তিনি মন্ত্রীদের পাইলট কার ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছেন।

কিন্তু এতে কি তৃণমূল সম্পর্কে সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশের যে ধারণা হয়েছে তাতে পরিবর্তন আসবে? যেভাবে বৃহস্পতিবারও অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলকে উদ্দেশ্য করে চোর চোর ধ্বনি উঠেছে হাইকোর্ট চত্বরে, তাতে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

সেক্ষেত্রে রাজ্যের মন্ত্রীরা যদি পাইলট কার ব্যবহার করা বন্ধ করে দেন, তাতেই কি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আসবে? এক্ষেত্রে ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, এতদিন কেন এ কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রী? মুখ্যমন্ত্রী নিজে যখন লালবাতি লাগানো গাড়ি ব্যবহার করেন না সেখানে মাসের পর মাস ধরে অনুব্রত মণ্ডল লালবাতি লাগানো গাড়িতে চড়ে রাজ্য চষে ফেলেছেন।

অনেক পরে তাঁকে দল লালবাতি লাগানো গাড়ি ব্যবহার করতে নিষেধ করে। বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে কলকাতা পুরসভার একাধিক মেয়র পারিষদ লালবাতি লাগানো গাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আসলে নেতা-মন্ত্রীরা মনে করেন গাড়িতে লালবাতি বা পাইলট কার থাকলে তাঁদের ‘ওজন’ অনেক বেড়ে যায়।

সমাজে তাঁদের কতটা গুরুত্ব রয়েছে, তাঁরা কতটা প্রভাবশালী, তা এভাবে দেখানো যায়। তাতে অনেকটাই মানসিক প্রশস্তি লাভ করেন তাঁরা। কিন্তু দুর্নীতি কাণ্ডে যেভাবে তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের নাম জড়িয়ে পড়েছে তাতে মমতা মনে করছেন অবিলম্বে এই দৃষ্টিভঙ্গির বদল হওয়া প্রয়োজন।

আর সেই লক্ষ্যেই তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। আসলে মমতা চাইছেন রাজ্যবাসী নেতা-মন্ত্রীদের মাটির মানুষ  হিসেবেই যেন দেখেন। মমতার এই সিদ্ধান্ত রাজ্যবাসীর মধ্যে কতটা প্রভাব ফেলে এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *