আরো খারাপ হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের পরিস্থিতি, চাঞ্চল্যকর তথ্য

এখনো পর্যন্ত বাংলায় খুঁটি শক্ত করতেই পারেনি গেরুয়া শিবির। ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। খালি হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের হাত! আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে গেরুয়া শিবিরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট কার্যত সেটাই বলছে। গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৮টি আসনে জিতে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে জোর ধাক্কা খাওয়ার পর থেকেই বঙ্গ বিজেপি ভাঙতে শুরু করেছে। একের পর এক নেতা, বিধায়ক, সাংসদ বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করছেন।

আসানসোল এবং ব্যারাকপুর থেকে বিজেপির টিকিটে জিতে আসা বাবুল সুপ্রিয় এবং অর্জুন সিং তৃণমূলে যোগদান করেছেন। এছাড়া দল ছেড়েছেন বিজেপির বেশ কয়েকজন বিধায়ক। আর বর্তমানে বাংলায় বিজেপির সাংসদ সংখ্যা কমে হয়েছে ১৬। এই পরিস্থিতিতে আগামী বছর বাংলা থেকে বিজেপি দুটির বেশি লোকসভা আসন পাবে না বলে গেরুয়া শিবিরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট জানাচ্ছে। সেই দুটি আসন হল দার্জিলিং এবং বনগাঁ। স্বাভাবিকভাবেই এ খবর সামনে আসায় বিমর্ষ গেরুয়া শিবির।

বিধানসভা নির্বাচনের পর পুরসভার ভোটে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে সরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বামেরা। বালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনেও সিপিএম দ্বিতীয় হয়েছে। এমনকী বালিগঞ্জের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দুটি ওয়ার্ডে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে দিয়ে প্রথম স্থানে উঠে এসেছিলেন সিপিএম প্রার্থী। সবমিলিয়ে এটা বলা যায় রাজ্য রাজনীতির সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বলছে সিপিএম ধীরে ধীরে তাদের হারানো জায়গা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। যা বিজেপির পক্ষে একেবারেই ভাল কথা নয়। এই জায়গা থেকে বিজেপি এবং সংঘ পরিবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির জেতা লোকসভা কেন্দ্রগুলি নিয়ে সমীক্ষা চালায়।

সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে জেতা আসনগুলি ধরে থাকা তো দূরের কথা, অধিকাংশ জায়গায় লড়াই চালাতে পারবে না বিজেপি। গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে পর্যদুস্ত হলেও উত্তরবঙ্গে বিজেপির ফল মোটের উপর ভাল হয়েছে। কিন্তু এই সমীক্ষা বলছে উত্তরবঙ্গের আটটি লোকসভা আসনের মধ্যে সাতটিতেই হার হবে গেরুয়া শিবিরের। তবে দার্জিলিং লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতবে বলে অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে।

কারণ হিসেবে বলা হয়েছে গোর্খাদের বড় অংশের সমর্থন এখনও বিজেপির পক্ষেই রয়েছে। আর মতুয়াদের সমর্থন এখনও পর্যন্ত সঙ্গে থাকায় বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রটিও বিজেপি ধরে রাখতে পারবে বলে মনে করছে তারা। তবে সিএএ লাগু না হওয়ায় মতুয়াদের সমর্থন আগামী লোকসভা ভোট পর্যন্ত সঙ্গে থাকবে কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন কিন্তু রয়ে গিয়েছে। তবু বনগাঁ ধরে রাখার ব্যাপারে আশাবাদী বিজেপি।  

বর্তমানে রাজ্য বিজেপিতে গোষ্ঠীকোন্দল তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রকাশ্যে বর্তমান সভাপতির সমালোচনা করছেন। বিজেপির সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ। সবচেয়ে বড় কথা তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে হাতে-গরম ইস্যু থাকলেও ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে ব্যর্থ রাজ্য বিজেপি। এতে দিন দিন আরও ঝিমিয়ে পড়ছেন নিচুতলার কর্মীরা। কর্মীদের চাঙ্গা করতে বার বার উত্তরপ্রদেশ জয়ের কথা বিজেপিকে বলতে হচ্ছে।

এছাড়া ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্যারিশমার কথা। কিন্তু শুধু এভাবে তো আর দল চালানো যায় না। বিশেষ করে বিজেপির মতো এটি রেজিমেন্টেড পার্টির অবস্থা বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র এক বছরের মধ্যে এরকমটা হবে কেন সে প্রশ্ন উঠছে। সব মিলিয়ে রাজ্য বিজেপি একেবারেই স্বস্তিতে নেই। আর গেরুয়া শিবিরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টেও সেটাই উঠে এসেছে। আগামী দু’বছরের মধ্যে পরিস্থিতি না বদলালে বিজেপি দুটিতে জিতবে, নাকি শূন্যে পৌঁছে যাবে তা নিয়ে চর্চা চলছে ওয়াকিবহাল মহলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *