বাড়তে থাকা বাজার মূল্যের জন্য কেন্দ্র সরকারকে দায়ী করলো

দিন প্রতিদিন বেড়েই চলছে বাজার মূল্য৷ মূল্যবৃদ্ধির কাঁটায় বিদ্ধ মধ্যবিত্ত৷ জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া৷ খাদ্য দ্রব্য থেকে জ্বালানি সব কিছুরই দামই অত্যন্ত চড়া৷ গত মার্চ মাসে গোটা দেশে মূল্যবৃদ্ধির গড় হার ছিল ৬.৯৫ শতাংশ৷ সেখানে এ রাজ্যে মূ্ল্যবৃদ্ধির হার পৌঁছেছিল ৮.৫ শতাংশে৷ যা গোটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি৷ যদিও মূল্যবৃদ্ধির দায় কেন্দ্রের ঘাড়েই চাপিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়৷ তাঁর দাবি, মানুষের পকেট লুট করছে কেন্দ্র৷ পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাসের দাম বাড়াতেই এই পরিস্থিতি৷ এমনকী ৮০০ জীবনদায়ী ওষুধের দাম বাড়িয়েছে মোদী সরকার৷ তাঁর কথায়, এই সরকার মানুষ মারার সরকার৷

পরিসংখ্যান বলছে, বিজেপি শাসিত দুই রাজ্য উত্তর প্রদেশ ও অসমে গত মার্চে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৮.১৯ শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধির হারে পশ্চিমবঙ্গের ঠিক পিছনেই রয়েছে এই দুই রাজ্য। দেশে কম বেশি জনসংখ্যার বাকি সব রাজ্যই কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির হার পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেকটাই কম৷ দক্ষিণী রাজ্য তামিলনাড়ুতে মূল্যবৃদ্ধির হার ৪.৩৬ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে পঞ্জাব। গত মার্চে উত্তরের এই রাজ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৪.৩৯ শতাংশ। শতাংশের বিচারে মার্চ মাসে কেরলে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৪.৭০ শতাংশ। দেখতে গেলে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে এ রাজ্যের ধারেপাশে নেই আর কোনও রাজ্য।

কেন্দ্রের পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি রূপায়ণ মন্ত্রকের অধীন এনএসও’র (ন্যাশানাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিস) দেশব্যাপী গ্রাম ও শহরের বাজার এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে গোটা দেশের ভোগ্যপণ্য মূল্যবৃদ্ধির এই তথ্য সংগ্রহ করেছে। রিপোর্ট বলছে, দেশের মোট ১,১১৪টি শহর ও ১,১৮১টি গ্রামীণ বাজার এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে রিপোর্ট প্রস্তুত করেছে এনএসও৷ 

নিশ্চিত ভাবেই মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ দফায় দফায় জ্বালানির দাম বৃদ্ধি৷ কিন্তু তাহলে তো পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব দেশের প্রতিটি রাজ্যেই পড়ার কথা। শুধু এরাজ্যেই কেন মূল্যবদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি? এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপিকা ঈশিতা মুখোপাধ্যায়৷ তাঁর কথায়, ‘‘পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়া মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এর আগে বিভিন্ন সময় রাজ্য সরকার পেট্রোল, ডিজেলের ওপর কর খানিকটা মকুব করে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানোর চেষ্টা করত। কিন্তু এখন জিনিসের দাম কমিয়ে মানুষকে মূল্যবৃদ্ধির হাত থেকে নিস্তার দেওয়ার জন্য বর্তমান সরকারের কোনও স্থায়ী পরিকল্পনা নেই।’’  তিনি আরও বলেন, ‘‘মূল্যবৃদ্ধির হার রুখতে কেরলের মতো রাজ্যগুলি গণবণ্টন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছে। যা এ রাজ্যে নেই৷’’

জিনিসপত্রের দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ৭ এপ্রিল নবান্নে টাস্ক ফোর্সের বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরের দিন থেকেই বাজারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার কথা ঘোষণা করা হয়৷ অথচ এত দিনেও এরাজ্যে জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি৷ এই সত্যটা স্বীকার করে নিয়েছেন টাস্ক ফোর্সেরই এক সদস্য। তাঁর কথায়,‘‘দাম কমানোর জন্য কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। বরং মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর বাজারে কিছু সবজির দাম আরও বেড়েই গিয়েছে।’’

মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, কেউ ২০০ টাকা নিলে চোখে দেখা যায়৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ১৭ লক্ষ কোটি টাকার উপর লুট করছে৷ সেই খেসারত কে দেবে৷ আর দাম বাড়লেই দাঙ্গা বাধাচ্ছে কেন্দ্রের সরকার৷ আগামী দিনে দেশটাকেই বিক্রি করে দেবে বিজেপি৷ রেল, সেল সব বেচবে৷ এদিকে, মূল্যবৃদ্ধি রুখতে টাস্ক ফোর্সের সভাতে মুখ্যমন্ত্রী এনফোর্সমেন্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বাজারে নজরদারি করার সময় যেন কোনও বাড়াবাড়ি করা না হয়। কোনোভাবেই যেন ‘প্রেসার ক্রিয়েট’ না হয়৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর পাইকারি বাজারে নাম কে ওয়াস্তে তল্লাশি করেছেন এনফোর্সমেন্টের কর্মীরা। ফলে বাস্তবে কোনও সুফলই পায়নি এ রাজ্যের মানুষ৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *