পদত্যাগের পরেও চারিদিকে জ্বলছে আগুন

প্রতিবাদ ওঠার সাথে সাথে মন্ত্রিত্ব পদ থেকে সরে গেলেন তিনি, কিন্তু তাতেও রক্ষা হলো না কিছুই। লঙ্কাপুরীতে পরিণত হলো সব কিছু। আর্থিক সংকট, জাতীয় অচলাবস্থা, প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা এবং শেষে দেশবাসীর বিদ্রোহের আগুনে জ্বলে পুড়ে ছারখার রাজপ্রাসাদ। মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এমন সব ভয়ানক পরিস্থিতির সাক্ষী থাকল লঙ্কাপুরীর সাধারণ মানুষ। এই মুহূর্তে কার্যত দেউলিয়া শ্রীলঙ্কায় চলা অভাব-অনটন এবং সংকটের বিরোধিতা করে শুক্রবার থেকেই ফের রাস্তায় নেমেছে দেশের সাধারণ মানুষ। সেদিন থেকেই আবারও নতুন করে তোলা হয় প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি। আগের বারের থেকেই এবারের দাবি এতটাই জড়ানো ছিল যে দুদিন কাটতে না কাটতেই শেষমেশ জনরোষের কাছে হার স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। কিন্তু তার পরেও কমেনি জনরোষের ঝাঁঝ।

প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দেওয়ার পরে এবং দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যা থেকে আরও তীব্র হয় বিক্ষোভ, আন্দোলন। শেষ পর্যন্ত পুলিশকে বিক্ষোভকারীদের বাগে আনতে গুলি পর্যন্ত চালাতে হয়। এর মধ্যেই রাজভবনের বাইরে বিক্ষোভ দেখানো সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্য গুলি ছুড়ে আত্মঘাতী হন একজন সাংসদ। এই ঘটনাই যেন ঘৃতাহুতির কাজ করে। শেষমেষ বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধানমন্ত্রী রাজাপক্ষের বাসভবনে ঢুকে তাতে পর্যন্ত আগুন লাগিয়ে দেয়। মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় রাজাপক্ষদের সাধের রাজপ্রাসাদ। ইতিমধ্যেই এই অগ্নিকাণ্ডের একাধিক ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে টুইটারে। আর এই দৃশ্য দেখে হতভম্ব গোটা বিশ্ব।

উল্লেখ্য শ্রীলঙ্কার সবথেকে প্রভাবশালী পরিবার হিসেবে পরিচিত রাজাপক্ষে পরিবার। এই পরিবারের দুই সদস্যই দেশ শাসনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা তথা রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী পদ দখল করেছেন। যদিও জনরোষের চাপে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দাদা মাহিন্দা রাজাপক্ষে কিন্তু এখনও রাষ্ট্রপতি হিসাবে এই পরিবারেরই আর এক সদস্য গতাবায়া রাজাপক্ষে। কিন্তু সেই সমস্ত ক্ষমতা এবং শক্তির পরোয়া না করেই বিক্ষোভকারী জনতা সোমবার জ্বালিয়ে দেয় রাজাপক্ষেদের রাজপ্রাসাদ।

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলনকারীরা আরও হিংস্র হয়ে ওঠেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারপক্ষকেই দায়ী করেছে বিশেষজ্ঞ মহল। কারণ বিক্ষোভকারীদের মুখ বন্ধ করতে সরকারি নির্দেশেই রাস্তায় নামেন সরকারি অনুগামীরা। তাতে পরিস্থিতি মুহূর্তে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে যখন দুইপক্ষের মধ্যে বেঁধে যায় প্রবল সংঘর্ষ। এই সংঘর্ষের মুখে পড়ে ইতিমধ্যেই পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে, আহত হয়েছেন অন্তত ১৩৮ জন। সংঘর্ষের মাঝে মন্ত্রীসভার বেশ কয়েকজন সদস্য গুরুতর আঘাত পেয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যেই একজন সাংসদ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্য গুলি চালিয়ে পরে নিজে আত্মঘাতী হন। এতে সোমবার রাতে কার্যত রণক্ষেত্রের রূপ নেয় রাজাপক্ষের বাসভবন চত্বর। বিক্ষোভকারীরা গেট ভেঙে ঢুকে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে খবর। এর সঙ্গে জানা যাচ্ছে শুধুমাত্র রাজাপক্ষে নয় শাসক দলের বহু নেতা মন্ত্রীদের বাড়িতেী এদিন রাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনা প্রসঙ্গে ক্রিকেট তারকা কুমার সাঙ্গাকারা টুইটারে শ্রীলঙ্কা সরকারের বিরোধিতা থেকে কলম তুলেছেন। তিনি এদিন একটি টুইটে লেখেন, একমাত্র সহিংসতা আপনার সমর্থকদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল গুন্ডা এবং গুন্ডারা তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের আক্রমণ করার আগে প্রথমে আপনার অফিসে এসেছিল। অন্যদিকে টুইটারে রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মাহিন্দ্রা উভয়েই এই সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিক্ষোভকারীদের আচরণএরই বিরোধিতা করা হয়েছে। তাদেরকে সরাসরি আক্রমণের জন্য দায়ী করা হয়েছে। সরকারি তরফে যে সমস্ত অনুগামীদের রাস্তায় নামানো হয়েছিল তাদের সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী কাউকে মুখ খুলতে দেখা যায়নি অন্য দিকে পুলিশের পদক্ষেপ নিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী। তারা দাবি করেন বিপুলসংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থাকা সত্বেও প্রতিরোধ রুখতে এবং তাদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *