ইডি-র দাবি, শুধু চাকরি জন্য নয় দফতরের বদলি ও পদোন্নতির জন্যও আদান প্রদান হত টাকা

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় জর্জরিত রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতিতে মুখ পুড়েছে রাজ্যের৷ বেআইনি ভাবে চাকরি পাইয়ে দিতে চলেছে কোটি কোটি টাকার খেলা৷ ইডি-র তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, শুধু চাকরি বিক্রিই নয়, শিক্ষা দফতরের বদলি ও পদোন্নতির জন্যও লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়া হত৷

আর সেই টাকা তোলার উপরেও নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের৷ টাকা তোলার কাজটি করত তাঁর অনুগত কিছু অফিসারকে নিয়ে গঠিত একটি গোষ্ঠী। ইডি-র অনুমান, এটা সবে শুরু৷ স্কুল সার্ভিস কমিশন ও প্রাথমিক টেট কাণ্ডে ১০০ কোটিরও বেশি টাকা উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বেশ কয়েকটি সূত্র হাতে এসেছে তাঁদের৷ যার ভিত্তিতেই এই দাবি করেছেন তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা৷

পাশাপাশি পার্থর ‘বান্ধবী’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের প্রতিটি বয়ানও খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। তদন্তকারী সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘এ রাজ্যের গোটা শিক্ষা দফতর ‘ইললিগাল মানি মেশিন’ বা বেআইনি টাকা তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছিল বলেই সন্দেহ। আর বেআইনি নিয়োগের মূল হোতা ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মিলত শিক্ষকদের বদলি এবং পদোন্নতির সুযোগ৷ যার মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।’’ তদন্তে জানা গিয়ছে, ‘‘এসএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগ এবং টেটের সূত্রে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ছাড়াও বদলি আর পদোন্নতির ক্ষেত্রেও কোটি কোটি টাকার লুট চলেছে।’’ 

কী ভাবে বেআইনি পথে টাকা তোলা হত? এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইডি-র ওই আধিকারিক বলেছেন, শিক্ষা দফতরে পার্থবাবুর ঘনিষ্ঠ এবং অনুগত বেশ কয়েক জন অফিসার রয়েছেন৷ তাঁদের নিয়েই একটি গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছিল। যাঁরা বেআইনি নিয়োগ, শিক্ষকদের বদলি এবং পদোন্নতির জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করত।

তদন্তকারীরা আরও জানান, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে বদলি ও পদোন্নতি সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাঁদের হাতে এসেছে৷ এই চক্রের গভীরে পৌঁছতে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে পার্থর ব্যক্তিগত সচিব সুকান্ত আচার্যকে। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল ইডি-র দফতরে৷ তাঁকে এবং পার্থকে মুখোমুখি বসিয়ে এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও জানান ইডি-র অফিসাররা। 

তদন্তকারীদের দাবি, অর্পিতা তাঁর বয়ানে জানিয়েছেন, পার্থ-ঘনিষ্ঠেরা নিয়মিত টাকা নিয়ে ডায়মন্ড সিটি এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে যেতেন৷ সেখানেই টাকা প্যাকেটবন্দি করা হত। প্যাকেট করার পর কখনও কখনও তা বাইরে নিয়ে যাওয়া হত। টাকার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী নিজে সন্ধ্যার পর ওই সব ফ্ল্যাটে যেতেন৷ রাতে ফ্ল্যাট থেকে চলে যেতেন তিনি৷

অর্পিতার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে যে ২০টি মোবাইল উদ্ধার হয়েছে, সেই সকল ফোন ঘেঁটে বেশ কয়েক জন মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক এবং কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নম্বর মিলেছে৷ মিলেছে শিক্ষা দফতরের অফিসার, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার শাসক দলের বহু ছোট-বড় নেতার নম্বরও৷ তাঁদের সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দুর্নীতি কাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললেই কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে৷ 

তদন্তকারীদের দাবি, ডায়মন্ড সিটি এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে শুধু পার্থবাবুই নন, অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তি ও শিক্ষা দফতরের কর্মীদেরও যাতায়াত ছিল৷ ওই দু’টি ফ্ল্যাটের সামনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং পার্থবাবুর গাড়ির লগ-বুক খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ ইডি-র অফিসাররা জানতে পেরেছেন, কয়েক বছর আগে পার্থ ও অর্পিতা একসঙ্গে সিঙ্গাপুর সফরে গিয়েছিলেন৷ সেই বিষয়েও খোঁজখবর চলছে। পাশাপাশি যে মোবাইল মারফত অর্পিতা ও পার্থ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতেন, সেই নম্বরটি অন্য এক জনের নামে নেওয়া হয়েছিল বলেও প্রাথমিক তদন্তের দাবি৷ খোঁজ চলছে সেই তৃতীয় ব্যক্তিরও৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *