তবে কি এবার ভাঙ্গনের শুরু। রাজ্যের শাসক শিবিরে এরম ঘটনা কেউ ভাবেনি কখনো। বিষয়টা এখন এমন যেটা কেউ কোনওদিন কল্পনা করেনি। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যে বাদানুবাদ, তর্কাতর্কি এর আগে দেখা গিয়েছে অনেকবার। সেসব আবার ঠিকও হয়ে গিয়েছে সময়ে সময়ে। কিন্তু এবারের ব্যাপারটা একদম ভিন্ন। এবার তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়! পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে আসন্ন দিনগুলিতে তা যে কোনও দিকে বাঁক নিতেই পারে। সেই প্রেক্ষিতেই এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন, অভিষেক কি তাহলে দলীয় পদ ছেড়ে শুধু সাংসদ হয়ে থেকে যাবেন?
সব রকমের টানাপোড়েনের উৎস প্রশান্ত কিশোরের ‘আইপ্যাক’। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে এটিকে বাংলায় আনার মূল মস্তিষ্ক ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আবহে তৃণমূলের মোটামুটি যাবতীয় কাজ করেছে এই সংস্থা। কানাঘুষো ছিল, প্রশান্ত কিশোরের মত নিয়েই ভোট সংক্রান্ত একাধিক কাজ করেছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ফল তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। এখন এই ‘আইপ্যাক’ নিয়েই ঝামেলার সূত্রপাত। এখন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, তৃণমূল দলের মধ্যেই কেমন একটা ভেদ সৃষ্টি হয়েছে। সরাসরি আঁচ পাওয়া যাচ্ছে মমতা-অভিষেক দ্বৈরথের। কারণ সংবাদমাধ্যমে মমতা অভিষেকের নাম এড়িয়ে যাচ্ছেন, ওদিকে, অভিষেক নিজেও এই ইস্যুতে এখনও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাই সূত্রের খবর, অভিষেক হয়তো তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরে যেতে পারেন। তাহলে ঠিক কী বার্তা যাবে?
আপাতত গোয়া নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরু থেকেই সেখানেই সংগঠনের দায়িত্বে তিনিই ছিলেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সফরের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের সামনে বললেন, ‘কেউ একজন গোয়া করছে।’ এখান থেকেই যেন কেমন একটা দূরত্বের আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়াও আইপ্যাক বা প্রশান্ত কিশোর নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মমতা। দলের কেউ আইপ্যাকের গুণগান গাইলেও তাঁকে ‘সাবধান’ করে দেওয়া হয়েছে। তাই প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে যে মমতার দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। সম্প্রতি আবার পুরভোটের প্রার্থী তালিকা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছিল তৃণমূল। মমতার ‘সবুজ সঙ্কেত’ ছাড়াই নাকি প্রথম তালিকা ঘোষণা হয়েছিল। পরে আবার দলীয় এক সিদ্ধান্তে মমতা নির্দেশ অমান্য করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি সত্যিই জটিল।
যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছে যে, গোয়া নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিষেক কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। তার আগে যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎ হয় তাহলে হয়তো পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। কিন্তু অভিষেক ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, দলীয় পদে থেকে যদি অভিষেক দলের কাজ করতে পারবেন না বলেই মনে করেন, তাহলে তিনি সেই পদে থাকবেন না।