দক্ষিণ দিনাজপুরের শান্ত পরিবেশে বড়দিনের উৎসবের আনন্দ বইছে। সমাজের সকল স্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে আনন্দঘন পরিবেশে বড়দিন উদযাপন করছেন। বাড়ি ও জনসমাগমস্থলগুলো ঝলমলে আলো, রঙিন সজ্জা এবং সূক্ষ্মভাবে তৈরি জন্মগুহার দৃশ্যে সজ্জিত হয়েছে, যা একটি উষ্ণ ও আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। জেলার ব্যস্ত শহরগুলোর মধ্যে বালুরঘাট ও গঙ্গারামপুরে বড়দিনের উৎসব মধ্যরাতের প্রার্থনার মাধ্যমে শুরু হয়। বালুরঘাটের সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার গির্জায় ভক্তদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রার্থনায় অংশ নেন অনেকে। গির্জার কোরাস দলের গাওয়া সুমধুর গানের সুর পুরো অনুষ্ঠানে এক স্বর্গীয় আবহ যোগ করে।
স্থানীয় বাজারগুলো গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ব্যস্ত ছিল। ক্রেতারা ক্রিসমাস ট্রি, সজ্জা ও উপহার সামগ্রী কিনতে ভিড় জমিয়েছিলেন। বেকারিগুলোতে ঐতিহ্যবাহী কেক ও প্লাম পুডিংয়ের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে উৎসবের বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হচ্ছিল, যা উৎসবের রঙে আরও বৈচিত্র্য এনেছে।
সম্প্রীতির বার্তা ছড়াতে অনেকেই অংশ নেন দান-ধ্যানে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। গঙ্গারামপুরে একদল তরুণ বঞ্চিত পরিবারের মধ্যে কম্বল ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। প্রকৃত অর্থে ভালোবাসা ও সহমর্মিতার বার্তা দিয়েই তারা বড়দিন উদযাপন করেন।উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বালুরঘাটে আয়োজিত ক্রিসমাস কার্নিভাল। এখানে ছিল লাইভ মিউজিক, নৃত্য পরিবেশনা এবং খাবারের স্টল, যেখানে পাওয়া যাচ্ছিল বাঙালি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি থেকে শুরু করে পশ্চিমা খাবার। ছোটদের জন্য ছিল সান্তা ক্লজ, যিনি উপহার বিতরণ ও ছবি তোলার মাধ্যমে আনন্দ দিলেন।
এক স্থানীয় বাসিন্দা, প্রতিবেদককে জানান, “এখানে বড়দিন শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এমন একটি সময়, যখন সব সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রিত হয়ে ঐক্য ও সম্প্রীতির আনন্দ উদযাপন করেন।”দিনের বাকি অংশজুড়ে পরিবারের সাথে মিলনমেলা, বিশেষ ভোজ এবং সন্ধ্যার প্রার্থনায় আনন্দ উদযাপন চলবে। দক্ষিণ দিনাজপুর তার ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশ্রণে আরও একবার প্রমাণ করল যে বড়দিনের জাদু সব ভেদাভেদ ভুলিয়ে মানুষকে একত্রিত করতে পারে।
এ বছরের দক্ষিণ দিনাজপুরের বড়দিন হৃদয়ছোঁয়া এক বার্তা বহন করে আনল—সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের চিরন্তন স্পৃহা।