জিএসডিপি ক্ষেত্রে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। আগামী দিনে দেশের জিডিপি হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নেবে উত্তর পূর্বাঞ্চল। এর পাশাপাশি ত্রিপুরা রাজ্যের উন্নয়ন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বরাবরই সহযোগিতা করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। মঙ্গলবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ত্রিপুরায় একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। রাজ্যের জন্য যারা কাজ করেছেন আজ তাদের স্মরণ করার দিন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অক্লান্ত সহযোগিতার কারণে ত্রিপুরা উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যখনই আমরা কোন সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কিছু অনুরোধ করি, তখন তারা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার সময় কেন্দ্রীয় সরকার অতিরিক্ত এনডিআরএফ টিম, হেলিকপ্টার সহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক সামগ্রী পাঠিয়ে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বন্যার সময় ত্রিপুরা রাজ্য সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তার কারণে আমার সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হয়েছি। ডাঃ সাহা আরো বলেন, আমাদের রাজ্যে একটা অংশের মানুষ সমস্যা তৈরি করার চেষ্টা করে। যদিও আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের মাধ্যমে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখি। রাজ্যের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শান্তি বজায় রাখা খুবই প্রয়োজন। আর শান্তি থাকলে বাইরের পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে। রাজ্যে বর্তমানে পর্যটন স্পটের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছে। বর্তমানে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরা সর্বোচ্চ জিএসডিপির জন্য দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশের জিডিপি ক্ষেত্রেও আগামী দিনে উত্তর-পূর্ব বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিপুরা ২০২৩-২৪ সালে অন্যতম ফ্রন্ট রানার রাজ্য হিসেবে এগিয়ে রয়েছে। এখন ত্রিপুরা সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে চলেছে। রাজ্যের বাজেট ২৮,০০০ কোটি টাকা। রাজ্যের নিজস্ব রাজস্বের উৎস দাঁড়িয়েছে ৩,৭০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন খাতে বাজেট ব্যয় করার পরে, আমাদের কাছে প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত রয়েছে। এরমধ্যে এডিসির জন্য ২৫%, নগর কেন্দ্রিক সংস্থা ও অন্যান্য ক্ষেত্রের জন্য ১০% বরাদ্দ করা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
ডাঃ সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ত্রিপুরাকে হিরা মডেল দিয়েছেন। এর ফলে জাতীয় সড়ক, উন্নত মানের ইন্টারনেট, রেলওয়ে, এয়ারওয়ের ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি করেছে ত্রিপুরা। এখন রাজ্যের বাইরে থেকেও অনেক মানুষ এখানে বিনিয়োগের জন্য আসছেন। আমরা ত্রিপুরা স্টার্টআপ পলিসি ও উন্নতি (UNNATI) স্কিম শুরু করেছি। রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনাও চালু করেছে। সেই সঙ্গে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বদা মহিলা ক্ষমতায়নের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ জনসংখ্যার প্রায় ৫০% নারী। রাজ্যে এখন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৫৬,০০০ হয়েছে। এদিন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিংকু রায়, সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, মুখ্যসচিব জিতেন্দ্র কুমার সিনহা, পুলিশ মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি. কে. চক্রবর্তী, অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য্য সহ অন্যান্য আধিকারিকগণ।