জলদাপাড়া বনাঞ্চল লাগোয়া একাধিক গ্রামে ধুমধাম করে মহাকালপুজো হয়। রবিবার জলদাপাড়ার টিইসি বিটে ৭০০ বনকর্মী মহাকাল দেবতার পুজো দেন। হাজারের বেশি মানুষকে খিচুড়ি প্রসাদ খাওয়ানো হয়। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের মানুষ হাতিকে ‘মহাকাল দেবতা’ হিসেবে মানেন। কিন্তু হাতি তাড়ানোর ক্ষেত্রে বনকর্মীদের অনেক সময় ‘মহাকাল দেবতার’ প্রতি ভরসা রাখতে হয়। চার বছর আগে হাতি তাড়াতে গিয়ে বনকর্মী পুণ্যদেব রায় গুরুতর জখন হন। বুনো হাতির আক্রমণে তাঁর পায়ের হাড় ভেঙে যায়। সেই যাত্রায় অবশ্য তিনি প্রাণে বেঁচে যান। তাই তিনি প্রথম জলদাপাড়ার টিইসি বিটে মহাকালপুজো শুরু করেন। পুণ্যদেব জলদাপাড়া পশ্চিম রেঞ্জের টিইসি (তোর্ষা ইস্ট কর্নার) বিটে কর্মরত।
সেই পুজো এখন গোটা জলদাপাড়ার বনকর্মীদের পুজো। টিইসি বিটের বিট অফিসার দেবর্ষি রায়ের কথায়, ‘বনকর্মীদের নিয়ে আমার পরিবার। এদিনের পুজোয় আমাদের তরফে সবরকম সহযোগিতা করা হয়েছে। আশপাশের গ্রামের মানুষও পুজোয় এসেছিলেন। এদিন সকাল থেকে টিইসি বিট চত্বরে মহাকালপুজোকে ঘিরে বনকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। সাত ফুটের মহাকাল দেবতার প্রতিমা আনা হয়। শালকুমারহাটের পুরোহিত বিষ্ণু চক্রবর্তী পুজো করেন। পুণ্যদেব আবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি ফেডারেশনের অরণ্য শাখার জলদাপাড়া ডিভিশনের সভাপতি। পুণ্যদেব বলেন, ‘গ্রামে গ্রামে মহাকালপুজো হয়। তবে এদিনের পুজো বনকর্মীদের সুরক্ষার জন্য। মহাকাল দেবতার দয়ায় দ্বিতীয় জীবন ফিরে পেয়েছি। এর আগে বনকর্মীদের অনেকে হাতির আক্রমণে মারা যান। তাই এই পুজোয় এখন গোটা জলদাপাড়ার ৭০০ বনকর্মী যুক্ত।’
২০২০ সালের ঘটনা। শালকুমারহাটের মুন্সিপাড়া গ্রামে এক রাতে দাঁতালের তাণ্ডব শুরু হয়। সেই হাতি তাড়াতে বনকর্মীরা যান। হাতির পালটা তাড়ায় বাকি বনকর্মীরা পালাতে সক্ষম হলেও পুণ্যদেব পারেননি। তিনি হাতির সামনে পড়ে যান। তারপর প্রায় এক বছর শয্যাশায়ী ছিলেন। পুণ্যদেব শুধু একা নন। মাঝেমধ্যে গ্রামে হাতি ঢুকে পড়ে। সেই হাতি তাড়াতে গিয়ে বনকর্মীদের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। কারণ হাতি তাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত বন্দুক বা অস্ত্রশস্ত্র নেই। লাঠি হাতে সাধারণ বনকর্মীদের ডিউটি করতে হয়। তাই এভাবে যাতে হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা মেলে এবং গ্রামের মানুষ যাতে সুরক্ষিত থাকেন সেই ভাবনায় ২০২১ সালে টিইসি বিটে পুণ্যদেব মহাকালপুজোর আয়োজন করেন৷ আরেক বনকর্মী কার্তিক মোদকের বক্তব্য, ‘নিজেদের পাশাপাশি গ্রামের মানুষের জীবন যাতে সুরক্ষিত থাকে, সেই প্রার্থনা এদিন মহাকাল দেবতার কাছে করেছি।’ বনকর্মীদের এই পুজোয় বন দপ্তর সহায়তা করছে। বিট সংলগ্ন এলাকাবাসী হরেন্দ্রনাথ রায় জানান, ঘরবাড়ি, জীবন ও জমির ফসল যাতে সুরক্ষিত থাকে এই প্রার্থনায় আমাদের গ্রামেও মহাকালপুজো হয়। বনকর্মীরা আমাদের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। তাই তাঁরা যাতে সুরক্ষিত থাকেন সেই প্রার্থনা জানাতে এদিনের পুজোয় আসি।’ একই বক্তব্য আরেক বাসিন্দা অমলেন্দু বর্মনের।