কয়েক বছর আগে বাবাকে হারিয়েছেন তিনি। সেই শোকে অসুস্থ হয়ে মা শয্যাশায়ী। তাঁর সেবা-শুশ্রূষায় অনেকটা সময় ব্যস্ত থাকতে হয় তাঁকে। এরই মাঝে সমাজে শিক্ষার আলো ছড়াতে বিনা পয়সায় পড়ান গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের। একইসঙ্গে জীবনযুদ্ধে লড়াই চালাতে ভোর থেকে বাজারে বসে যান সবজি বিক্রি করতে। তার আগে পাইকারি বাজার থেকে খরিদ করেন টাটকা সবজি। এটাই তাঁর বারোমাস্যা। তিনি তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের নাটাবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা রমণী সরকার। ২০১৪ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে এমএ পাশ করেন। ২০১৭-তে বিএড সম্পূর্ণ হয়। ২০১৮-২০২০ সাল অবধি নকশালবাড়ির এক বেসরকারি স্কুলে চাকরি করেছেন। মায়ের যত্নআত্তির জন্য চাকরি ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসেন। মাঝে আপার প্রাইমারি পরীক্ষায় পাশ করলেও বিএড না থাকায় সুযোগ হাতছাড়া হয়। তিনি এখন তুফানগঞ্জে ডিএড নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। গত আট মাস ধরে তাঁকে নাটাবাড়ি বাসস্ট্যান্ড বাজারে সবজি বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।
বাবা-মায়ের চিকিৎসায় সব সম্বল প্রায় শেষ। এখনও কিছু জমি বন্ধকি রয়েছে, টাকার অভাবে ছাড়াতে পারছেন না। পরিবারে রয়েছে শয্যাশায়ী মা, দাদা, বৌদি আর ভাইপো। আপাতত দু’ভাই মিলে সবজির দোকান সামলাচ্ছেন। রোজ ভোর সাড়ে তিনটায় তুফানগঞ্জে যেতে হয় রমণীকে। দেরিতে গেলে পাইকারি বাজারে ভালো মানের টাটকা সবজি মেলে না। আর ভালো সবজি না কিনতে পারলে বিক্রিও মার খাবে। তাই, দৈনিক ভোর থেকে শুরু হয়ে যায় রমণীর জীবন যুদ্ধ। দুপুর অবধি সবজি বিক্রি করে বাড়ি ফিরে চলে শয্যাশায়ী মায়ের সেবাযত্ন। এরই ফাঁকে স্নানাহার সেরে পাড়ার গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলে তাঁর বিনা বেতনের টিউশনি সেন্টার। নিজে গরিব বলেই গরিব পরিবারের সন্তান হওয়ায় অর্থ তাঁর অজানা নয়। উচ্চশিক্ষিত রমণীর স্বপ্ন এমফিল করার। কিন্তু বাধা অর্থ। শিক্ষাকে জীবনভর চর্চায় রাখতেই বিনা বেতনে পড়ানোর সিদ্ধান্ত। বিএড করার সময় থেকেই রমণী জলপাইগুড়িতে সংস্কৃত ভাষার সংযোজক ও প্রচারক ছিলেন বলে জানান। এখন তিনি কোচবিহারের সংস্কৃত ভাষার প্রচারক হিসাবে কাজ করছেন। রমণীর কথায়, ‘অসুস্থ মায়ের সেবা-শুশ্রূষা ও সংসারের হাল ধরতে সবজি ব্যবসাকেই বেছে নিয়েছি। তবে প্রতিযোগিতার বাজারে ট্যাঁকে জোর না থাকায় ব্যবসায় কিছুটা পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু হাল ছাড়িনি। এরই মধ্যে বিনা বেতনে ছেলেমেয়েদের পড়িয়ে সমাজে শিক্ষার আলো ছড়ানোর চেষ্টা করছি। চলছে সরকারি চাকরির চেষ্টাও। দেখা যাক, শেষ অবধি রমণীর কপালে শিকে ছেড়ে কি না!