তিনি আইন রক্ষা করেন, তিনিই প্রতিমা গড়েন৷ এভাবেই চলে আসছে দীর্ঘ বছর৷ আরও বড় বিষয়, প্রতিমা গড়ার ক্ষেত্রে তিনি মাটিকে মাধ্যম করা থেকে যতটা পারেন দূরে থাকেন৷
তিনি ভূমিক্ষয় কী, সেটা বোঝেন, বৃক্ষচ্ছেদনও বোঝেন৷ এই বোধই তাঁকে অন্যদের থেকে যেন খানিকটা আলাদা করে রেখেছে৷ এর আগে কখনও গাছের ছাল, কখনও সুতো, কখনও আমের আঁটি দিয়ে দুর্গামূর্তি বানিয়েছেন৷ এবার মাতৃমূর্তি তৈরিতে মাধ্যম বেছে নিয়েছেন ধানের তুষ আর গমের ভূষি৷ তাঁর ছ’মাসের পরিশ্রম এবার ধীরে ধীরে রূপ পেতে চলেছে৷ প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে মা৷
তিনি বিষ্ণুচন্দ্র সাহা৷ পেশায় একজন হোমগার্ড৷ মালদাতেই কর্মরত৷ ছোট থেকে মূর্তি গড়ার শখ৷ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই শখও বাড়ে৷ তাছাড়া আরও একটু স্বাচ্ছন্দে সংসার চালানোর তাগিদাটাও ছিল৷ এভাবেই মিশিয়ে ফেলেছেন পেশার সঙ্গে শখকে৷ তবে আগামী অক্টোবরেই হোমগার্ডের চাকরি থেকে অবসর নিচ্ছেন তিনি৷ তারপর একসময়ের শখই হতে চলেছে তাঁর ভবিষ্যৎ পেশা৷
প্রতি বছরের মতো বিষ্ণুবাবু এবারও একটিই বড় দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করছেন৷ মালদা শহরের বাঘাযতীন ক্লাবে সেই প্রতিমা দেখতে পাওয়া যাবে৷
তিনি জানাচ্ছেন, “এবার আমার ভাবনায় বনদুর্গা৷ আদ্যাশক্তি সবার মা৷ তিনি প্রকৃতিরও মা৷ যেভাবে এখন বৃক্ষচ্ছেদন চলছে, তাতে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে৷ এই প্রকৃতির কথা চিন্তা করেই আমি মাটি ছাড়া অন্য কোনও মাধ্যমে বড় আকারের দুর্গাপ্রতিমা বানাই৷ভূমিক্ষয়ের জন্য মাটি এখন দুর্লভ হয়ে গিয়েছে৷ আমার মনে হয়, শিল্পীরা যদি এদিকে একটুখানি নজর দেন, তবে প্রতি বছর প্রতিমা নির্মাণের জন্য বিপুল পরিমাণ মাটি নষ্ট হবে না৷ নিরঞ্জনের পর নদীগর্ভেও মাটি জমবে না৷ নদীর স্রোত বাধার মুখে পড়বে না৷ তবে আমি মাটির প্রতিমা তুলে দেওয়ার কথা বলছি না৷ ছোট প্রতিমাগুলি মাটিরই হোক৷ বড় প্রতিমা হোক অন্য মাধ্যমে৷” বিজ্ঞানমনস্ক হোমগার্ড শিল্পী বিষ্ণুবাবুর মাথায় খেলে বেড়াচ্ছে প্রকৃতি সংরক্ষণের ভাবনা৷ তাঁর ভাবনা অন্য শিল্পীদেরও উদ্বুদ্ধ করবে কি? উত্তরের অপেক্ষায় থাকতেই হবে৷