লক্ষ্য এখন একটাই, আগামী লোকসভা নির্বাচন। প্রতিটি রাজনৈতিক দল পাখির চোখ করে আছে এই নির্বাচনের জন্য। আর মাত্র দেড় বছর পর লোকসভা নির্বাচন। এখন থেকেই লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। কোন রাজ্যে কীভাবে ঘুঁটি সাজাতে হবে তা নিয়ে তাদের চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। চুপ করে বসে নেই তৃণমূলও।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় কাণ্ডের জেরে দল চরম অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। সেই জায়গা থেকে শিক্ষা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নেতা-মন্ত্রীদের কড়া বার্তা দিয়ে বলেছেন তাঁরা এমন কোনও কাজ যাতে না করেন যার জন্য দলকে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। এই আবহের মধ্যে রাজ্য মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আর সেখানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গকে। নতুন আট মন্ত্রীর মধ্যে তিনজন উত্তরবঙ্গের তিনটি জেলাকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। কোচবিহারের দিনহাটার উদয়ন গুহ, মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের তাজমুল হোসেন এবং উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক সত্যজিৎ বর্মনকে মন্ত্রী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
উদয়ন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। আর তাজমুল ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প এবং বস্ত্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী এবং সত্যজিৎ বর্মন স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। উল্লেখ্য স্কুলশিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে এবার সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পরেশ চন্দ্র অধিকারীকে।
গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়লেও উত্তরবঙ্গ থেকে মোটামুটি সন্তোষজনক ফল করেছে তারা। উত্তরবঙ্গের ৫৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ২৭টিতে জয় পেয়েছে বিজেপি। যা তৃণমূলের কাছে একেবারেই স্বস্তিদায়ক নয়। সবচেয়ে বড় কথা গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের আটটি আসনের মধ্যে একটিতেও জিততে পারেনি তৃণমূল।
সেখানে কংগ্রেস একটি এবং বিজেপি সাতটিতে জয় পেয়েছে। তখন থেকেই হারানো জায়গা পুনরুদ্ধার করতে উঠেপড়ে লেগেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা নির্বাচনের পর নিয়মিত উত্তরবঙ্গ সফর করতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। সেই সঙ্গে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় গিয়েছেন।
বিজেপির কেউ কেউ উত্তরবঙ্গকে আলাদা করার যে প্রস্তাব এনে মাঝেমধ্যেই বিতর্ক উস্কে দেন, তার তীব্র প্রতিবাদ করছে তৃণমূল। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বারবার দাবি করেছেন তাঁর শাসনকালে উত্তরবঙ্গ জুড়ে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। সেই লক্ষ্যেই উত্তরবঙ্গের জন্য ‘উত্তরকন্যা’ তৈরি করেছেন তাঁরা। কিন্তু তারপরও দেখা গিয়েছে লোকসভায় তৃণমূলের ফল একেবারেই ভাল হয়নি উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে।
সেই সঙ্গে সেখানকার জেলাগুলিতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরম আকার নিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নের নিরিখে উত্তরবঙ্গকে আরও বেশি ফোকাসে আনতে চাইছেন। আর সেই কারণেই মন্ত্রিসভার রদবদলে উত্তরবঙ্গ বিশেষ প্রাধান্য পেল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
উল্লেখ্য দীর্ঘদিন ধরেই উত্তরবঙ্গের একাংশ মনে করেন তাঁরা দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় অনেক বেশি অবহেলিত। সেই সূত্রে গ্রেটার কোচবিহার বা কামতাপুর আন্দোলন উত্তরবঙ্গ জুড়ে বড় আকার নেয়। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছেন পাহাড় থেকে সমতল, তিনি রাজ্যভাগের বিপক্ষে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ থেকে তিনজনকে মন্ত্রী করে নিঃসন্দেহে সেখানকার লক্ষ লক্ষ মানুষকে বিশেষ বার্তা দিলেন। এতে তৃণমূলের সংগঠনেও বিশেষ গতি আসবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সব মিলিয়ে রীতিমতো ভাবনা চিন্তা করেই মমতা যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা স্পষ্ট।