রাজনীতির মঞ্চে নতুন জল্পনা। তবে কি আবার রাজ্যের শাসক শিবিরের সাথে যুক্ত হতে চলেছেন তারা? এই প্ৰশ্নই ঘুরছে এখন রাজনীতিতে। গতকাল বিকেলে আচমকাই নবান্নে গেলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাদের নিয়ে চর্চার কোনও শেষ নেই এমনিতেই। কিন্তু এই ইস্যু নিয়ে জনগণের কৌতূহল যে বাড়বেই তা একবারে স্পষ্ট। এদিন দুজনকে নবান্নে ঢুকতে দেখা গিয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে যে তারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। তাহলে কি আবার ঘাসফুল শিবিরের দিকে পা বাড়িয়ে ফেলেছেন যুগলে? প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই।
বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, আবার তৃণমূলেই ফিরতে চলেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। দল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পর সেই অধ্যায় কেমন ছিল তা আলাদা করে এখন আর কাউকে মনে করানোর প্রয়োজন নেই। বিজেপির হয়ে বা বলা ভাল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সেইভাবে কোনও কিছুই করতে পারেননি তারা। এক কথায়, পুরোপুরি ব্যর্থ। বারবারই তাঁর এবং বৈশাখীর সঙ্গে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের মনোমালিন্য হয়েছে।
এমনকি বিধানসভা নির্বাচনে শোভন নিজের পরিচিত কেন্দ্র থেকে টিকিট পাবেন ভেবেছিলেন, কিন্তু সেটাও তাঁকে দেয়নি বিজেপি। সেটাই হয়তো বিজেপির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের শেষ পেরেক। তারপরও কেটে গিয়েছে বছর খানেকের বেশি। অবশেষে সেই ‘দিদি’র কাছেই ফিরে এলেন তৃণমূলের ‘কানন’। এবার দেখা যাক, খাতায়-কলমে শিবিরে ফেরেন কিনা তিনি বা তারা দুজন।
নবান্নে প্রায় এক ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে মিলল তেমনই ইঙ্গিতই দিলেন। শোভনের কথায়, ‘‘মমতাদির লক্ষ্য বাস্তবায়িত করাই এখন আমার কাজ।’’ তাঁরে পাশে দাঁড়িয়ে বৈশাখী বললেন, ‘‘দিদি-ভাইয়ের মধ্যে থাকা অভিমানের প্রাচীর ভেঙে গিয়েছে।’’
বৈশাখী বলেন, নবান্ন কোনও উপহার দেওয়া নেওয়ার জায়গা নয়৷ নিশ্চয় রাজনৈতিক আলোচনাই হয়েছে৷ তাছাড়া শোভনের সঙ্গে দিদির দীর্ঘ দিনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক৷ ভাই আর দিদির অনেক মিষ্টি মধুর আলোচনা হয়েছে৷ তবে কি তৃণমূলে ফিরছেন শোভন? এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করতে নারাজ বৈশাখী৷ তবে তাঁর কথায়, ‘‘আমি মনে করি শোভনের এখনও রাজনীতিতে দেওয়ার অনেক কিছু আছে৷ আমি চাই ও শীঘ্রই ওঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করুক৷’’
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই চূড়ান্ত হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রাক্তন মেয়রের বিশেষ বান্ধবী৷ তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক চিরকালই ভালো৷ মধ্যিখানে অভিমানের একটা প্রাচীর তৈরি হয়েছিল৷ সেই অভিমানের প্রাচীর ভেঙে গিয়েছে৷ আবার আগের শোভনকে দেখতে পেলাম৷ ওঁর প্রতি দিদির স্নেহ আগেও দেখেছি৷ দিদি কোনও দিনই ওঁকে মন থেকে দূরে সরাতে ন৷ ওঁরও মনের মধ্যেও দিদি৷ দিদি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেই ভাবেই ও কাজ করবে৷’’ বৈশাখী আরও বলেন, ‘‘বিজেপি’র থেকে যখন বেরিয়ে এসেছিল, তখন অনেকেই ওঁর ‘অবিচুয়ারি’ লিখে দিয়েছিল৷ তবে শোভনের রাজনৈতিক সত্ত্বাকে এখনও দিদি পছন্দ করে৷’’ তিনি কি আবার ‘সক্রিয়’ রাজনীতিতে ফিরছেন? শোভনের উত্তর, ‘‘রাজনীতিতে সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় বলে কিছু আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে মমতা’দির কাছে আসব। চা খাব। এতে জল্পনার কী আছে! ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গা নিশ্চয়ই আমার। কিন্তু রাজনৈতিক কোনও সিদ্ধান্ত, আমার রাজনৈতিক জীবন— সবটাই মমতাকেন্দ্রিক। মমতা’দির ইচ্ছা বাস্তবায়িত করাই আমার লক্ষ্য।’’