মহারাষ্ট্রে আট দিন ধরে নিখোঁজ করোনা আক্রান্ত রোগীর দেহ হাসপাতালের শৌচালয়ে কী করে এল, তার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা না পেয়ে হাসপাতালের ডিনকে সাসপেন্ড করলেন মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্য অধিকর্তা।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ‘নিখোঁজ’ থাকার পর, শেষ পর্যন্ত ওই হাসপাতালেরই শৌচালয় থেকে উদ্ধার হল অশীতিপর এক বৃদ্ধার দেহ! দুঃখজনক এই ঘটনায় মুম্বইয়ের জলগাঁও সিভিল হাসপাতালের ডিনকে বুধবার সাসপেন্ড করা হয়েছে।
২ জুন হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে বৃদ্ধাকে শেষবার দেখা গিয়েছিল। হাসপাতালে সবার নজর এড়িয়ে, অদ্ভুতজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যান! গোটা হাসপাতাল ঘুরে, বৃদ্ধার খোঁজ পায়নি পরিবার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাঁর সন্ধান দিতে ব্যর্থ হয়।
শেষে পুলিশের আশ্রয় নিতে হয় পরিবারকে। থানায় সেদিনই একটি মিসিং ডায়েরি করা হয়েছিল। কিন্তু, নিখোঁজ রোগীর হদিশ পেতে কেন আট দিন লেগে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বুধবার ওই হাসপাতালেরই একটি শৌচালয় থেকে তীব্র কটু গন্ধ বেরোচ্ছিল। সেই গন্ধের সূত্র খুঁজতে গিয়েই নিখোঁজ রোগীর বিকৃত হয়ে যাওয়া মৃতদেহে শৌচালয়ের ভিতরে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুর চড়িয়ে মৃত বৃদ্ধার নাতি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে ভিডিয়ো বার্তা পাঠান। ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির আর্জি জানান। ওই ভিডিয়ো বার্তার কিছুক্ষণের মধ্যেই জলগাঁও সিভিল হাসপাতাল এর ডিন ডাক্তার ভাস্কর খৈরেকে সাসপেন্ড করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাক্তার তাত্যারাও লাহানে তাঁকে সাসপেন্ড করেন।
মৃতের পরিবার জানায়, ২৭ মে বৃদ্ধার কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার পরেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জলগাঁও সিভিল হাসপাতালে স্থানান্তর করার আগে অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শৌচালয়ের মধ্যে কোভিড আক্রান্ত অশীতিপর এই বৃদ্ধার কী করে মৃত্যু হল, পুলিশ তা তদন্ত করে দেখছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৪ হাজার ৪১। মারা গিয়েছেন ৩,৪৩৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৩,২৫৪ জন। বুধবার পর্যন্ত রাজ্যে ৫ লক্ষ ৯৩ হাজার ৭৮৪ জনের করোনা টেস্ট হয়েছে। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৪ হাজার ৫১৭ করোনা রোগী।
মহারাষ্ট্রের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এদিন অত্যন্ত কড়া মনোভাব ব্যক্ত করে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে যে বিধিনিষেধ রয়েছে, তা সকলকে মেনে চলতে হবে। এই বিধিনিষেধের প্রতি সামান্য অসম্মান প্রদর্শন, সরকার বরদাস্ত করবে না। দরকার হলে, পুনরায় কড়া ভাবে লকডাউন বলবত্ করতে হবে।
মহারাষ্ট্রে লোকাল ট্রেন পরিষেবা যাতে চালু করা যায়, তার জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জিও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উদ্ধব এদিন বলেন, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের সমস্যার কথা জানিয়ে কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছি।