ডিজিটাল ক্ষেত্রে বিভেদের সেতুবন্ধনে স্মার্টফোনের প্রয়োজনীয়তা এদেশে অনস্বীকার্য এবং সবসময়ে অনলাইন থাকার জন্য সাশ্রয়ী ডিভাইস খুবই প্রয়োজন। নোকিয়া ফোনের সংস্থা এইচএমডি গ্লোবালের ভাইস-প্রেসিডেন্ট সন্মীত কোছার এরকমই অভিমত প্রকাশ করে বলেছেন, ২০২০ সালে ভারতে ১৫০ মিলিয়ন ডিভাইস ক্রয় হয়েছে, আর এথেকে স্পষ্ট হয়েছে সাধারণ মানুষ স্মার্টফোনকে কতটা আবশ্যকীয় বস্তু হিসেবে গণ্য করেন। তাঁর মতে, ভারতে স্মার্টফোনের বাজার মূল্যের উপর নির্ভরশীল। এখানে গড়ে ১২ হাজার টাকা মূল্যের স্মার্টফোন সবথেকে বেশি বিক্রয় হয়, আর সেইকারণে এই সেগমেন্টে প্রতিযোগিতাও বেশি।
সন্মীত কোছার বলেন, অ্যান্ড্রয়েড একটি প্রশ্নাতীত অপারেটিং সিস্টেম, যা অধিকাংশ স্মার্টফোনকে শক্তি জোগায়। কাস্টমাইজড সফটওয়্যার-সহ স্পেক-শিটের প্যাকেজ বেশিরভাগ ব্র্যান্ডের মূলধন। কিন্তু একটি ফোনের সর্বমোট দাম কিন্তু তার হার্ডওয়্যারের থেকে বহুলাংশে বেশি। যখন ফোন ব্যবহারকারী বাজারে উপলব্ধ অসংখ্য স্মার্টফোনের অপশনগুলি খতিয়ে দেখেন, তখন তিনি এমন ডিভাইস পছন্দ করেন যাতে বাজেট অনুসারে সর্বাধিক স্পেসিফিকেশন রয়েছে। এটা অবশ্য ‘বেটার ইউজার এক্সপিরিয়েন্স’ ও ‘আপ-টু-ডেট সফটওয়্যারের’ সঙ্গে আপোস করেই সম্ভব।
সন্মীত কোছার জানান, যদি গ্রাহক প্রয়োজনীয় ফিচার্স যেমন ‘লং টার্ম ওএস আপডেট’ উপেক্ষা করতে চান তাহলে তার ‘ডেটা প্রাইভেসি’ যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়, কারণ ব্যবহারকারীর ‘ডেটা প্যাটার্ন’ একটি চাহিদাসম্পন্ন পণ্য। কোনও ব্যক্তির ‘ডেটা প্যাটার্ন’ বিবেচনা করে তাকে ফোনে বিজ্ঞাপন, পপ-আপ পাঠানো হয় এবং তা হার্ডওয়্যারের লভ্যাংশের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তাঁর প্রশ্ন, যদি সম্পূর্ণ মূল্য নেওয়ার পরেও কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড হিসেবে সেই ফোনটিকে ব্যবহার করে চলে, তাহলে কি সেই ফোনকে কারও নিজস্ব ফোন বলা যায়। গ্রাহকদের চিন্তা করা উচিত, ফোনের উপরে নিয়ন্ত্রণ ত্যাগ করে সেটিকে ‘সিকিউরিটি রিস্কের’ দিকে ঠেলে দেওয়া হলে তা কতটা ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে।
ডিভাইসে থাকা প্রি-ইনস্টলড অ্যাপের থেকে গুগল প্লে স্টোর থেকে ইনস্টল করা অ্যাপ অনেক নিরাপদ, এই অভিমত প্রকাশ করে সন্মীত কোছার বলেন, প্রি-ইনস্টলড অ্যাপগুলি প্রায়শই ডেটা সংগ্রহে ‘সিস্টেম-লেভেল অ্যাক্সেস’ পেয়ে থাকে, ফলে ডেটা পিলফারিংয়ের ক্ষেত্রে চিনের মতো অন্যদেশের সার্ভারে পাচার হওয়া আটকাতে পারে না। বর্তমানে যেহেতু স্মার্টফোন কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা নিচ্ছে, তাই কারা এবং কেন তার ডেটা সংগ্রহ করছে সেবিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
এইচএমডি গ্লোবালের ভাইস-প্রেসিডেন্ট সন্মীত কোছারের মতে, স্মার্টফোনে প্রি-লোডেড কাস্টম অ্যান্ড্রয়েড স্কিন ফোনের ব্যবহারকারীর হাতে সেরকম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেয় না। ওইসব অ্যাপ্লিকেশন সাধারণত সরানো যায় না, ফলে ডেটা ইউসেজ মেট্রিক্সে সেরকম স্বচ্ছতাও থাকে না। এইসব ঘটনা পিয়োর অ্যান্ড্রয়েড এক্সপিরিয়েন্সের একেবারে বিপরীত। এখানে কোনও বাড়তি ব্লোট থাকে না এবং ফোন ব্যবহারকারী নিজের ইনস্টল করা অ্যাপের উপরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হন। এই কাস্টমাইজেশনের ফলে সিকিউরিটি আপডেট ও ওএস আপডেট পাওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব ঘটে, আর তার ফলে ডিভাইসটি ডেটা চুরিতে সক্রিয় সাইবার-ক্রিমিনালদের আক্রমণের শিকার হয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে বলা যায়, বাৎসরিক আপডেট ও সিকিউরিটি প্যাচ-সহ পিয়োর অ্যান্ড্রয়েড অনেক দ্রুত কাজ করতে সক্ষম।
স্মার্টফোনের বাজারে অনেকরকম বিকল্প রয়েছে, যেগুলি কোনও আপোস ছাড়াই ইউজার প্রাইভেসি ও সেফটিকে প্রাধান্য দেয়। একথা জানিয়ে সন্মীত কোছার বলেন, স্মার্টফোন কেনার সময়ে ব্যবহারকারীকেই সবদিক বিবেচনা করে ঠিকঠাক জেনেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। স্বল্পমেয়াদী স্পেকসের পরিবর্তে দীর্ঘকালীন নিরাপত্তার অভিজ্ঞতা পেতে তিনি আগ্রহী কীনা, সে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে।