সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাসে কোরোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে, জানালেন ডঃ সুনীল রায়

আগামী ছয় মাস পর করোণার তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হতে পারে বাচ্চারা, এমনই আশঙ্কা করে উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলায় পিকু বিভাগ (প্রেডিয়াটিক ইনসেন্টিভ কেয়ার ইউনিট) চালুর নির্দেশ দিয়ে গেলেন উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্যবিভাগের ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) ডঃ সুনীল রায়। মালদা জেলায় ২০ বেডের পিকু বিভাগ চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন ওএসডি ডঃ সুনীল রায় । তবে সেই বিভাগটি কোথায় চালু হবে, তারজন্য জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও প্রশাসনের কর্তাদের জায়গা দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার মালদা জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের নিয়ে করোণা সম্পর্কিত তদারকি ও বৈঠক করতে আসেন রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের উত্তরবঙ্গের ওএসডি ডঃ সুনীল রায়। এদিন দুপুর বারোটা নাগাদ মালদা মেডিক্যাল কলেজের কনফারেন্স রুমে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন ডঃ সুনীল রায়। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চলে এই বৈঠক।  উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র, মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডক্টর পার্থপ্রতিম মুখার্জি, ভাইস প্রিন্সিপাল পূরণজয় সাহা, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শৈবাল ব্যানার্জি সহ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের অন্যান্য পদস্থ কর্তারা। এই বৈঠকে মালদা জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়। সেখানেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমনের মারাত্মক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য দপ্তরের উত্তরবঙ্গের ওএসডি ডঃ সুনীল রায়। 

এদিনের বৈঠকে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কাছে জেলার করোণা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য ও রিপোর্ট সংগ্রহ করেন ওএসডি ডঃ সুনীল রায়। মালদা জেলায় কোথায় কিভাবে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ চলছে, এছাড়াও মেডিকেল কলেজ সহ অন্যান্য এলাকাতেও করোনার চিকিৎসার কি ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, গড়ে প্রতিদিন কতজন রোগী এই সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন এবং চিকিৎসা করাচ্ছেন, পাশাপাশি কতজন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন, সেইসব বিষয়ে এদিনের বৈঠকের মাধ্যমে খোঁজখবর নেন স্বাস্থ্য দপ্তরের উত্তরবঙ্গের ওএসডি ডঃ সুনীল রায়।

এদিন বৈঠক শেষে করোণ চিকিৎসা সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উত্তরবঙ্গের ওএসডি ডঃ সুনীল রায় বলেন, “এর আগেও আমি মালদায় এসে করোণা সম্পর্কে সমস্ত রকম বিষয়ে তদারকি করে গিয়েছি, আবারো মালদায় এলাম কারণ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। মালদা তার ব্যতিক্রম নয়। তবে মালদায় করোনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ঠিকঠাক কাজ চলছে। কিছু দিনের মধ্যেই মালদা মেডিকেল কলেজে অক্সিজেন প্লান্টের কাজ চালু হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে মালদায় প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। পাশাপাশি সেফ হাউস এবং কোভিড হাসপাতালে বেড সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকেরাও রাতদিন এক করে করোনা রোগীদের জন্য কাজ করছেন । মালদা মেডিকেল কলেজে বর্তমানে  করোণা বিভাগে ২১২টি বেডের ব্যবস্থা রয়েছে। সেটি বাড়িয়ে আরো ১৫০টি বেড করা হবে।”

স্বাস্থ্য দপ্তরের উত্তরবঙ্গের ওএসডি ডঃ সুনীল রায় বলেন, “করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর আশঙ্কা করা হচ্ছে যে আগামী সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবর মাসে তৃতীয় সংক্রমনের ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। তাতে বিশেষ করে বাচ্চারা আক্রান্ত হবার আশঙ্কা আমরা করছি। এজন্য আগে থেকেই উত্তরবঙ্গের প্রতিটা জেলাতেই পিকু বিভাগ চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপাতত ২০টি বেড নিয়ে এই বিভাগ চালু করা হবে। মালদা মেডিকেল কলেজের এদিনের বৈঠকে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ভালো জায়গা দেখে বাচ্চাদের  চিকিৎসার জন্য এই বিভাগ যেন তৈরি রাখা হয়। এখনো পর্যন্ত মালদা জেলায় করোনা নিয়ে সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসা পরিষেবা চলছে। এই রোগ সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে খুটিনাটি বিষয় গুলি জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়েছি। যেকোনো পরিস্থিতিতে  প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তর প্রত্যেকেই প্রস্তুত রয়েছে। তবে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি করোনায় আক্রান্ত হলে বাড়িতে বসে না থেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন , চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করান।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *