রাশ টানছে প্রাণী হত্যায়

প্রাণী হত্যা মহা পাপ। নিরীহ বন্যপ্রাণীদের হত্যা রুখতে আদিবাসী সমাজের ‘শিকার উৎসবে’ রাশ টানতে চাইছে বনদপ্তর। বন্যপ্রাণী হত্যা আটকাতে ইতিমধ্যে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করেছে বন দপ্তর। পাশাপাশি ঐ জনজাতির মানুষদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন তাঁরা। বিশেষ সূত্রে খবর, আগামী ১২ বৈশাখ বাঁকুড়ার শিবডাঙ্গা-বিবড়দা-তালডাংরার জ্বালার জঙ্গল দিয়ে এবছর শিকার উৎসব শুরু। পরে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে ১১ তম শিকার উৎসব দিয়ে এবছর এই প্রথার শেষ হবে। এই শিকার উৎসব গুলিতে অংশ নেবেন বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ার আদিবাসী সমাজের মানুষ।

এই অবস্থায় বণ্যপ্রাণ রক্ষায় ‘শিকার উৎসব’ বন্ধ রাখার আবেদন জানালেন পাঞ্চেত বনবিভাগের বিভাগীয় আধিকারিক সত্যজিৎ রায়। তিনি ২০১৯ সালের কলকাতা হাইকোর্টের এপ্রসঙ্গে একটি রায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বন্যপ্রাণ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। ‘শিকার উৎসবে’র নামে অবাধে বন্যপ্রাণ হত্যা চলতেই থাকলে আগামী প্রজন্মকে দেখানোর মতো কিছুই থাকবেনা বলে তিনি জানান। যদিও রাঢ় বঙ্গে আদিবাসী জনজাতির চিরাচরিত শিকার উৎসব শুরু হয়েছে। সাধারণভাবে মার্চের শেষ থেকে শুরু হয় আদিবাসীদের শিকার উৎসব, যা চলে আগামী জুন মাস পর্যন্ত। এই তিন থেকে সাড়ে তিন মাস সময়কালে দফায় দফায় ‘শিকার উৎসবে’র নামে অবাধে বন্যপ্রানী হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ।

আর সেই কারণে বনদপ্তরের বক্তব্য মানতে নারাজ আদিবাসী সমাজের মানুষ। তাদের মতে, শিকার উৎসব মানেই বণ্যপ্রাণ হত্যা নয়। ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের বাঁকুড়া জেলা সহ সভাপতি শ্যাম মাণ্ডি বলেন, চিরাচরিত এই প্রথাকে সাঁওতালী ভাষায় ‘সেন্দড়া’ বলা হয়। যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় ‘সংগ্রহ করা’। আগেকার দিনে যখন চিকিৎসা ব্যবস্থা এতো উন্নত ছিলনা তখন বছরের বিশেষ দিনে আদিবাসী সমাজের মানুষ জঙ্গল থেকে ভেষজ ওষুধের গাছ গাছালি সংগ্রহ করে আনতেন। সেই থেকেই এই প্রথা চলে আসছে। একই সঙ্গে তিনি আরো বলেন, সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে ও বিশেষ কারণে বণ্যপ্রাণ হত্যার দায় আদিবাসী সমাজের উপর চাপানো হয়। আর এই কাজটি বনদপ্তর সুকৌশলে করে বলে তিনি স্পষ্টতই অভিযোগ করেন। এমন কিছু জীবজন্তু, পাখি ইত্যাদি হারিয়ে গেছে তার দায় কে নিবে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, জীব জগতের প্রত্যেকের বেঁচে থাকার অধিকার। বনদপ্তরের সৌজন্যে জঙ্গল কেটে সাফ করার জন্যই বন্যপ্রাণ বিলুপ্ত হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

এই ইস্যুতে আদিবাসী সমাজের পাশে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ। সংগঠনের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক জয়দেব চন্দ্র বলেন, জঙ্গল থেকে শুরু করে জঙ্গলের পশু পাখি রক্ষা করছেন ওঁরাই। বনদেবতার পূজো ওরা আদিম কাল থেকে করে আসছেন। যে সব পশু পাখি ওঁরা শিকার করেননা সেসব হারিয়ে যাচ্ছে কি করে? অবাধে গাছ কাটা, জঙ্গলে আগুন লাগানোর ঘটনাই ঐসবের পিছনে দায়ী। প্রশাসনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলিও বন ও বন্যপ্রাণ রক্ষায় ভালো কাজ করছে। তারপরেও এবিষয়ে আরো জনসচেতনতা তৈরী জরুরী বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *