চ্যাম্পিয়ন এখন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দৌড়ানোর স্বপ্ন দেখেন না

খয়েরবাড়ি বনাঞ্চলের মাটির মেঝের ঘরে টিনের বেড়ায় শচীন তেন্ডুলকারের দেওয়া চেকের রেপ্লিকাটা এখনও টাঙানো। তক্তা কেটে তৈরি করা সেলফে থরে থরে ট্রফি যা এখনো আছে সাজানো। যার মধ্যে অনেকগুলি প্রথম পুরুস্কারের । টিনের চালের নিচে শুয়ে থাকা ছেলেটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতায় দৌড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন,সেই স্বপ্ন তাকে আরো জোরে ছুটতে সাহায্য করত। তবে বর্তমানে জীবনযুদ্ধে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন মাদারিহাটের বীরপাড়া ব্লকের দক্ষিণ খয়েরবাড়ির হাসিবুল । বহু প্রতিযোগিতায় বাকি দৌড়বিদের পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু এক্ষেত্রে দারিদ্র্যের কাছে হার মানতে হয়েছে। পেটের টানে বাবার সঙ্গে এখন করতে হচ্ছে জমি চাষ।তবুও অন্যের জমিতে করতে হচ্ছে চাষ। ছাড়তে হয়েছে মাঝপথে পড়াশোনা ।

দৌড়ের প্রতি আকর্ষণ তার ছোট বেলা থেকেই।পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াশোনা করার সময় থেকেই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রণ করে থাকেন, এমনকি ভিনরাজ্যে ম্যারাথনে একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন হাসিবুল।স্কুলজীবনেই পুলিশ বিভাগে আয়োজিত ম্যারাথনে অংশ নেন তিনি। মালদার একটি ক্লাবের পরিচালনায় ২৬ কিমি ম্যারাথনে ২০১৬ থেকে টানা তিনবার হ্যাটট্রিক করেন।

এরপর তিনি হারিয়ানা বেঙ্গালুরুতে ও গিয়েছেন ।বেঙ্গালুরুতে ২১কিমি জাতীয়স্তরের ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় পঞ্চদশ স্থান অধিকার করেন। গুয়াহাটি ম্যারাথনে তৃতীয় স্থান পান। এরপর কলকাতায় আইডিবিআই আয়োজিত ২১ কিমি ম্যারাথনে তৃতীয় স্থান পেয়ে পুরুস্কারের চেক গ্রহণ করেন শচীন তেন্ডুলকারের হাত থেকে হাসিবুল। আরো এগোনোর ইচ্ছে হাসিবুলের ,কিন্তু আর্থিক সমস্যায় দাড় করিয়ে দিয়েছে তাঁকে।

কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই আর্থিক অনটনে পড়াশোনা বাদ দিতে হয়েছে । হাসিবুল বলেন প্র্যাক্টিস করার জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক,জুতো কেনার খরচ অনেক এইসব পিছনে আর্থিক সংগতি জোটানোর আমার পরিবারের নেই । তাই তাকে তার বাবা ফয়জুল হকের নিয়মিত সাহায্য করে জমি চাষে। তবে তিনি নিয়মিত সকালে ওঠে প্র্যাক্টিস করেন । স্থানীয়স্তরের ম্যারাথনগুলি অংশ গ্রহন করেন ।তবে তিনি আর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দৌড়ানোর স্বপ্ন দেখেন না । হাসিবুলের মা হাসেনা বেগম বলেন ‘ছেলেটা কে নিয়ে একসময় অনেক বড় স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তু ভুলেই গিয়েছি যে গরিব মানুষদের স্বপ্ন দেখা যায়না ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *