উত্তর মালদার বিজেপির সাংসদের দেওয়া আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স জঙ্গলের মধ্যে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। বিজেপির সাংসদের তহবিল থেকে দেওয়া এই এম্বুলেন্স নিয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। পাল্টা বিজেপি সংসদের অভিযোগ, ভালো কাজ করায় সহ্য করতে পারছে না তৃণমূল। তাই মিথ্যা আরোপ দিচ্ছে।
চাঁচলের রোটারি ক্লাবকে ২০২০ সালে করোনা সংক্রমনের প্রাকমুহুর্তে আইসিইউ পরিষেবা মুলক অ্যাম্বুলেন্স দান করেছিলেন উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। সাংসদ তহবিলের ২৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মূলত এই অ্যাম্বুলেন্সটি দেওয়া হয় ওই ক্লাবকে।
আর এখন আইসিইউ এম্বুলেন্স নিয়েই রাজনৈতিক বিতর্ক দানা বেঁধেছে। দীর্ঘ এক বছর ধরে অত্যাধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা মূলক এই অ্যাম্বুলেন্সটি কেন আম বাগানের মধ্যে জঙ্গলে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন চাঁচলের সাধারণ মানুষ।
যদিও চাঁচল রোটারি ক্লাব কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “আমরা আইসিইউ এম্বুলেন্স চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের ফাঁকা এম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে। আইসিইউ পরিষেবা যুক্ত করা হয়নি। কাজেই সেই এম্বুলেন্স পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।”
উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, “সাংসদ কোটার টাকা জেলাশাসকের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়। অ্যাম্বুলেন্সে আইসিইউ লাগানোর জন্য যে অর্থের দরকার, তার জন্য বারবার জেলাশাসককে অর্থ অনুমোদন করতে বলেছি। কিন্তু প্রশাসন উদাসীন মনোভাব দেখাচ্ছে।” এব্যাপারে পাল্টা আন্দোলনের কথা বলেছেন বিজেপি সাংসদ।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের মুহূর্তে উত্তর মালদার চাঁচল মহকুমার বাসিন্দাদের জন্য আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স উদ্বোধন করেছিলেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। রোটারি ক্লাবকে সেটি দিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। কিন্তু ওই আইসিইউ এম্বুলেন্স দেওয়ার পর থেকেই সেটি অদ্ভুতভাবে জঙ্গলের মধ্যে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, আইসিইউ এম্বুলেন্স দেওয়া হলেও ইনসেন্টিভ কেয়ার ইউনিটের পরিষেবা ওই অ্যাম্বুলেন্সে নেই। এমনি সাধারণ অ্যাম্বুলেন্স প্রচুর রয়েছে চাঁচল শহরে। সাধারণ এই এম্বুলেন্স পরিষেবা চালাতে রাজি হয় নি রোটারি ক্লাব কর্তৃপক্ষ। যার ফলে দীর্ঘদিন ধরেই আমবাগানে ঝোপের মধ্যে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বিজেপির সাংসদের দেওয়া এই অ্যাম্বুলেন্সটি।
চাঁচলের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, “ভোটের রাজনীতি করতেই এই ধরনের কাজ করা হয়েছে। যখন এই এম্বুলেন্সের উদ্বোধন হয়েছিল তখন বলা হয়েছিল এই এম্বুলেন্স এর মাধ্যমে মুমূর্ষ রোগীরা ইনসেন্টিভ কেয়ার ইউনিটের পরিষেবা পাবেন। কিন্তু সেই পরিষেবা অ্যাম্বুলেন্সে আজও চালু হয়নি। যার কারণে এম্বুলেন্সটি বন্ধ রয়েছে। এটি খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমরা চাই প্রশাসন অবিলম্বে এই অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাটি চালু করুক।”
চাঁচল রোটারী ক্লাবের সভাপতি জয়ন্ত প্রামাণিক জানিয়েছেন, “আমরা সাংসদের কাছে আইসিইউ পরিষেবা মূলক অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের ফাঁকা একটি এম্বুলেন্স গাড়ি দেওয়া হয়েছে। সেই গাড়ি নিয়ে কি করব? আইসিইউ পরিষেবা যুক্ত করার জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন। সেই টাকা আমাদের ফান্ডে নেই। সাংসদ তহবিল থেকে সেটি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।”
চাঁচলের তৃণমূল বিধায়ক নিহার ঘোষ বলেন, “যতটুকু জানতে পেরেছি পুরোনো এম্বুলেন্স থেকেই হয়তো এটিই নতুন এম্বুলেন্স বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই অ্যাম্বুলেন্সটি উদ্বোধনের সময় ইনসেন্টিভ কেয়ার ইউনিটের পরিষেবা থাকার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেটি নেই। অথচ সেই পরিষেবা দেখিয়ে বিল তুলে নেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগের কথা আমি জানতে পেরেছি। প্রতিশ্রুতি মত বিজেপি সাংসদ এম্বুলেন্স দিয়েছে ঠিকই কিন্তু তার কোনো কার্যকারিতা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এই আম্বুলেন্স দেওয়া নিয়েও আর্থিক অনিয়মের একটা অভিযোগ রয়েছে। সেটি হয়তো প্রশাসন খতিয়ে দেখছে। তার জন্যই নতুন করে অর্থ বরাদ্দ হয়নি।”
উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, “তৃণমূলের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। গত বছর আমি দুটো আইসিইউ পরিষেবা মূলক অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছিলাম। একটি মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সকে আরেকটি চাঁচল রোটারি ক্লাবকে। মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের অ্যাম্বুলেন্সটি এখনো বহাল তবিয়তে চলছে। চাঁচলের রোটারি ক্লাবকে দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সে আইসিইউ পরিষেবা চালু হয়নি। অ্যাম্বুলেন্সে ইনসেন্টিভ কেয়ার ইউনিট বসানো হয়নি। কারণ, সাংসদ তহবিলের টাকা জেলাশাসকের মাধ্যমে দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু সেই অর্থ আটকে রাখা হয়েছে। কাজেই অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাটা এখনো চালু হয়নি। আমরা আবারও এব্যাপারে প্রশাসনকে জানাবো।” নইলে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু।