ফাইজার-বায়োএনটেক এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা-র কোভিড টিকার ১টি ডোজই সংক্রমণের হার কমাতে পারে অন্তত ৬৫ শতাংশ। ওই দু’টি টিকার ডোজ নেওয়া থাকলে সংক্রমণের হার কমে ৯০ শতাংশ। প্রবীণ ও তরুণ দুই প্রজন্মের ক্ষেত্রেই এই দু’টি টিকা সমান কার্যকর। তবে এই দু’টি টিকার ১টি বা ২টি ডোজ নেওয়া থাকলে উপসর্গহীন রোগীদের থেকে সংক্রমণের হার যতটা কমে, তার চেয়ে অনেক বেশি কমে উপসর্গ থাকা কোভিড রোগীদের থেকে সংক্রমণের হার। একই সঙ্গে সংক্রমিতের পুনরায় সংক্রমণের হারও কমায়।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, সংক্রমণের গতিতে দ্রুত রাশ টানতে যে এই দু’টি টিকার ১টি বা ২টি ডোজ খুব কার্যকর হতে পারে এই গবেষণায় তার ইঙ্গিত মিলল। ভারতের মতো যে সব দেশে সংক্রমণের হার কমানো একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই গবেষণার ফলাফল সেই সব দেশের উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ব্রিটেনে সাড়ে ৩ লক্ষ কোভিড রোগীর উপর চালানো গবেষণার ফলাফল এই আশাব্যঞ্জক খবর দিয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটেনের জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের তরফে শুক্রবার যৌথ ভাবে এই গবেষণার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। রিভিউ পর্যায় পেরিয়ে গবেষণাপত্রটি একটি আন্তর্জাতিক চিকিৎসা জার্নালে প্রকাশিত হতে চলেছে বলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, গবেষণাটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক, আমজনতার সঙ্গে তা বহু প্রবীণ কোভিড রোগীর উপরেও চালানো হয়েছে। সংক্রমণের হার দ্রুত কমানো সম্ভব হলে যে শুধু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করানোর সংখ্যা আর মৃতের সংখ্যা কমবে, তা নয়; পরে সংক্রমণশৃঙ্খলটিকেও অনেকটা বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব হবে। বাড়বে পরবর্তী তরঙ্গগুলি রোখার সম্ভাবনা।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ব্রিটেনের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা সাড়ে ৩ লক্ষ কোভিড রোগীর উপর চালানো হয়েছে গবেষণা। দেখা গিয়েছে, ফাইজার ও অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার ২১ দিন পর সংক্রমণের হার দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। এও দেখা গিয়েছে, দু’টি টিকার প্রথম ডোজই উপসর্গ থাকা রোগীদের থেকে সংক্রমণের হার বেশি কমিয়েছে। দু’টি টিকার প্রথম ডোজের ২১ দিন পর উপসর্গহীন রোগীদের ক্ষেত্রে যেখানে সংক্রমণের হার কমেছে ৫৭ শতাংশ, সেখানে উপসর্গ থাকা রোগীদের থেকে সংক্রমণের হার কমেছে ৭২ শতাংশ।
এও দেখা গিয়েছে, ফাইজার টিকার দ্বিতীয় ডোজটি সংক্রমণের হার কমানোর ক্ষেত্রে আরও সফল হচ্ছে। ওই টিকার দ্বিতীয় ডোজের পর উপসর্গ থাকা রোগীদের থেকে সংক্রমণের হার কমছে ৯০ শতাংশ। আর উপসর্গহীন রোগীদের থেকে সংক্রমণের হার কমছে ৭০ শতাংশ।
অন্যতম গবেষক কোয়েন পাওয়েলস বলেছেন, প্রবীণ ও যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে নানা ধরনের অসুখে ভুগছেন, এই দু’টি টিকা যে তাঁদের ক্ষেত্রে তেমন কার্যকর নয়, এমন কোনও প্রমাণ অন্তত এই গবেষণায় মেলেনি। এটা খুবই আশাব্যঞ্জক।