শিলিগুড়ির সোনার কন্যা আজ দিনমজুরের ভূমিকায়

ভারতের দুজন খো খো খেলোয়াড় সালমা এবং জ্যোতি। শিলিগুড়ির একই কলোনিতে বাড়ি তাদের।দুই কন্যার ছোট্টো ঘর ভর্তি সোনার মেডেল , অসংখ্য প্রতিযোগিতায় সেরার খেতাব প্রাপ্ত প্রশংসাপত্র। খো খো খেলায় দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করলেও আজ তাদের দিন কাটছে ঘাস কেঁটে এবং দিন মজদুরি করে।
শিলিগুড়ি শহরের তরিবাড়ি কলোনিতে নিজের পরিবারের সাথে একটি ছোট্টো ঘরে থাকে সালমা মাঝি । ২০১৬ সালে সাফ গেমসে যে দলটি ভারতের হয়ে সোনা জেতে সেই দলেরই অন্যতম খেলোয়াড় সালমা। উল্লেখ্য যে ২০১৬ সালেই জুনিয়র দল থেকে সিনিয়ার খো খো দলে সুযোগ পায় সালমা। তার পর কেঁটে গিয়েছে চার চারটি বছর। কিছু দিনের জন্য আলোর মুখ দেখলে ও পুনরায় সেই অন্ধকারেই নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছে সালমার ব্যক্তিগত জীবন। সালমার বাবা পেশায় শ্রমিক, পরিবারে তার ৪ জন সদস্য। কোনো রকমে সংসার চলে তাদের। তাই জাতীয় দলের খো খো প্রতিযোগিতার বিজয়ী সোনার কন্যা সালমা আজ একশো দিনের কাজের শ্রমিক। কখনো এলাকার জঙ্গল সাফ করে আবার কখনো রাস্তা তৈরীর পাথর টেনে দিন মজুরি করে দিন কাঁটাচ্ছে সালমা। স্যাঁতস্যাঁতে বাড়িতে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শংসাপত্র এবং পুরস্কার। তাই প্রায় সব পুরষ্কার এবং শংসাপত্র রোঁদে দেয় সালমা। নিজের সপ্নগুলো কে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে সে।
সালমা জানিয়েছে বহুবার সরকারের কাছে আবেদন করা সত্ত্বেও কোন লাভ মেলেনি। অনেকবার সরকারের কাছে একটি একটি চাকরির জন্য আবেদন করেছে সে। চাকরি যেমনই হোক অস্থায়ী হলেও তার কোনো অসুবিধে নেই বলে জানিয়েছে সে। তবে সব সময়ই প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই মেলেনি।

সালমার বাড়ির অনতিদূরেই থাকে জ্যোতি বিশ্বকর্মা। উল্লেখ্য যে সে ২০১১ সালের জাতীয় দলের সদস্য। তার ঝুলিতে বর্তমান একাধিক স্বর্ণপদক। চলতি বছরে রাজ্যের তরফ থেকে সে পেয়েছে খেলশ্রী পুরস্কার।
তবে কথায় রয়েছে পেটের টান বড় টান। জ্যোতির বাবা পেশায় নাইট গার্ড এবং ছোট বোন প্রতিবন্ধী। নেই কোনো আয়ের এর উৎস। সেই কারণে শ্রমিক হিসেবে রাস্তার মজুরি কাজের নাম লিখিয়েছে যদি। তাতে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে সংসার।
জ্যোতি জানিয়েছে, রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকার উভয়ের কাছেই অনেকবার এই অসহায়তার একথা জানিয়েছে সে এমনকি মন্ত্রী গৌতম দেব এবং বিধায়কের কাছে ঐ বিষয়টি নিয়ে বারবার গিয়েছে,তবে প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই মিলে নি।

এই বিষয়ে খো খো ফাউন্ডেশনের সদস্য ভাস্কর দত্ত মজুমদার বলেন, বাংলার এই দুইসোনার মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দুঃখিত। যেই দুই মেয়ে বাংলার গর্ব, তাদের দিন মজুরের ভূমিকায় দেখে এবং এই দুইজনকে কোন ভাবে সাহায্য করতে না পেরে তিনি লজ্জিত।
খো খো ভারতের জনপ্রিয় এবং জাতীয় খেলা। এই দেশেই খো খো বিজয়ী সোনার কন্যা দের এই করুন অবস্থা একেবারেই গ্ৰহনযগ্য নয়‌।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *