চরম হাহা কার সৃষ্টি হয়েছে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে

দুই দেশের মধ্যে চলছে যুদ্ধ পরিস্থিতি এরই মাঝে চরম আর্থিক সঙ্কটে শ্রীলঙ্কা৷ ধুঁকছে দেশের অর্থনীতি৷ এই অবস্থায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে৷ দেশে জ্বালানির হাহাকার, বন্ধ পরিবহণ ব্যবস্থা৷ খরচ বাঁচাতে ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা ধরে চলছে লোডশেডিং৷ অন্ধকারে ডুবে গোটা দেশ৷ ফুরিয়ে এসেছে খাদ্যশস্য, অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী৷ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে ২ কোটি মানুষের এই দ্বীপরাষ্ট্র৷ পুলিশের সঙ্গে দৎায় দফায় চলছে সংঘাত৷  

ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ)-এর সঙ্গে আলোচনা শুরুর আগে গত মার্চ মাসে মুদ্রার তীব্র অবমূল্যায়ন ঘটে শ্রীলঙ্কায়৷ এই অর্থনৈতিক ঘাটতি এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে যুঝে চলেছে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ৷ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য কেনা বা আমদানির জন্যও বিদেশি মুদ্রা নেই সে দেশের সরকারের কাছে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রীলঙ্কার আয়ের অন্যতম উৎস ছিল পর্যটন। কিন্তু, করোনা সংক্রমণের জেরে সেই শিল্প থমকে গিয়েছে। একইসঙ্গে প্রশাসনের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ও একের পর এক ঋণ গ্রহণই শ্রীলঙ্কার আর্থিক মন্দার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে৷ শুক্রবারের তথ্যের ভিত্তিতে, মার্চে শ্রীলঙ্কার মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.৭ শতাংশ। দেশে খাদ্যশস্যের দামও প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। 

২০১৯ এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কের ওয়ার্কিং পেপারে বলা হয়েছে, “শ্রীলঙ্কায় জোড়া ঘাটতি দেখা দিয়েছে৷ এই জোড়া ঘাটতিই ইঙ্গিত দেয় যে একটি দেশের জাতীয় ব্যয় তার জাতীয় আয়কে ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং দেশের ব্যবসায়িক পণ্য ও পরিষেবাগুলির উৎপাদন অপর্যাপ্ত।”

ঋণের দায়ে জর্জরিত শ্রীলঙ্কার হাতে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অবশিষ্ট ছিল ২.৩১ বিলিয়ন ডলার৷ কিন্তু, ২০২২ সালে ৪  বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধের সম্মুখীন রাজাপক্ষের দেশ৷ গত মাসে প্রকাশিত দেশের অর্থনীতির একটি পর্যালোচনা থেকে জানা যাচ্ছে, আইএমএফ বলেছে যে সরকারি ঋণ ‘অস্থির পর্যায়ে’ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নিয়ার টার্ম ঋণ পরিশোধের জন্য তা অপর্যাপ্ত।

কয়েক মাস ধরে, রাজাপক্ষের প্রশাসন এবং সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ শ্রীলঙ্কা (সিবিএসএল) ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি সত্ত্বেও আইএমএফের সাহায্য চাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ এবং বিরোধী নেতাদের আহ্বানকে উপেক্ষা করেছে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর, সরকার এপ্রিলে আইএমএফের কাছে যাওয়ার পরিকল্পনা তৈরি করে। বৃহস্পতিবার আইএমএফের এক মুখপাত্র বলেন, আগামী দিনে সম্ভাব্য ঋণ কর্মসূচি নিয়ে আইএমএফ শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনায় বসবে৷ জানা গিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে তাঁদের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য ৪০ হাজার টন চাল পাঠাচ্ছে ভারত৷  সাধারণ মানুষের হাতে খাবার টুকুও যেটুকু খাদ্যদ্রব্য অবশিষ্ট রয়েছে তার দামও হয়েছে আকাশছোঁয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *